থিয়েটার আমাদের কাছে সবসময়ই ভালো ভালো নাটক দেখার জায়গা। থিয়েটার দিয়ে একটি জাতিকে চেনা যায়। মঞ্চনাটকে যেমন দেখা যায় দুর্দান্ত অভিনয়-দক্ষতা, তেমনি সমাজ বা জীবনও উঠে আসে এসব নাটকে। কিন্তু কেমন হবে যদি সেই থিয়েটারে গিয়ে মুখোমুখি হতে হয় ভৌতিক অভিজ্ঞতার? নাটকে নয়, বাস্তবেই যদি ধরা দেয় তেমন অভিজ্ঞতা?
পাঠক, চলুন ঘুরে আসি পৃথিবীর এরকম দশটি ভৌতিক থিয়েটার থেকে।
১. রয়েল থিয়েটার (ড্রুয়ারি লেন, লন্ডন)
১৬৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই থিয়েটারটি লন্ডনের সবচেয়ে পুরাতন থিয়েটার। বর্তমান বিল্ডিংটি ১৮১২ সালের। এখানে এলে দেখা যায়, তিনকোণা হ্যাট পরা এক লোককে। বিভিন্ন প্রদর্শনীতেই নাকি তাকে উপস্থিত থাকতে দেখেছেন অনেকে! এই আত্মা পরিচিত ‘দ্য মেন ইন গ্রে’ নামে। ধূসর পোশাকের জন্যই এমন নাম হয়েছে তার। তবে এর দ্বারা এখনো কারো কোন ক্ষতি হয়েছে কিনা জানা যায়নি। ম্যান ইন গ্রে-র উপস্থিতিকে বরং মনে করা হয় বিভিন্ন প্রদর্শনীর জন্য সৌভাগ্যজনক। তিনি এলে সেদিন নাকি বিক্রিও বেড়ে যায় অনেকাংশে!

২. নিউ এমস্টারডম থিয়েটার (নিউ ইয়র্ক)
১৯০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই থিয়েটারটি। এর সাথে জড়িয়ে আছে অলিভ থমাসের নাম। ইনি একসময় নিউ ইয়র্কের সেরা সুন্দরীর খেতাব জিতেছিলেন। যুক্ত হয়েছিলেন বিখ্যাত দল জিগফিল্ড এর সাথে। ১৯২০ সালে পারদের তৈরি বড়ি খেয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। কেন ঘটেছিলো এই ঘটনা, তা অস্পষ্ট এখনো। তবে এখনো থিয়েটারটিতে দেখা মেলে তার। এই আত্মার সাথে দেখা হওয়া ও এ সংক্রান্ত বিভিন্ন ভৌতিক ঘটনার কথা জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন অভিনেতা-অভিনেত্রী। মঞ্চের পেছনে সেলারে নাকি এখনো তার ছবি রাখা আছে!

৩. প্যালেস থিয়েটার (নিউ ইয়র্ক)
নিউ ইয়র্কের প্যালেস থিয়েটার ঘিরে অদ্ভুতুড়ে ঘটনার শেষ নেই। ১৯১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই থিয়েটারে আছে বহু অদ্ভুতুড়ে ঘটনার ইতিহাস। জুডি গারল্যান্ড এখানকার সবচেয়ে বিখ্যাত ভূত। ইনি একসময় এই থিয়েটারেরই অভিনেত্রী ছিলেন। এখনো বিভিন্ন নাটকের প্রদর্শনীতে সাদা গাউন পরে উপস্থিত থাকতে নাকি দেখা যায় তাকে! এছাড়াও আছে লুইস বসালিনো-র ঘটনা। এই স্টান্টম্যান গুরুতর আহত হন ১৯৩৫ সালে এক ঝুঁকিপূর্ণ স্টান্ট নিতে গিয়ে। পরে মারা যান তিনি। এখনো তাকে নাকি দেখা যায় স্টান্ট নেয়ার চেষ্টা করতে! আরো আছে খেলনা নিয়ে খেলতে থাকা এক শিশুর হাসির শব্দ, ব্যালকনিতে হেঁটে বেড়ানো এক রহস্যময় নারী।

৪. বোস্টন ইউনিভার্সিটি থিয়েটার
বোস্টনের এই থিয়েটারটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন হেনি জেউইট। ১৯৩০ সালের দিকে প্রতিষ্ঠা করা এই থিয়েটারটি একসময় অব্যাহতভাবে লস দিতে থাকে। পরে এক কোম্পানি এটি কিনে নেয়। কিন্তু তা মেনে নিতে পারছিলেন না জেউইট। সেলারে ঝুলে পড়েছিলেন গলায় দড়ি দিয়ে। আর তারপর থেকেই এই থিয়েটারে রয়ে গেছে তার প্রেতাত্মা। বিভিন্ন অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়েছে অভিনয়শিল্লী থেকে শুরু করে কলাকুশলী, দর্শক সবারই।

৫. প্যালেইস গার্নিয়ার (প্যারিস, ফ্রান্স)
১৮৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় প্যারিসের এই খ্যাতনামা থিয়েটারটি। তবে এই থিয়েটারে শুরু থেকেই আছে অশরীরীর উপস্থিতি- এমনটাই শোনা যায় স্থানীয় মানুষদের থেকে। নির্বাক যুগের বিখ্যাত সিনেমা ‘ফ্যান্টম অভ দ্য অপেরা’র কাহিনী গড়ে উঠেছে এই থিয়েটার অবলম্বনে। এখানে ১৮৯৬ সালে ঝাড়বাতি ধ্বসে একজন টেকনিশিয়ান নিহত হন। এছাড়া সেলার থেকে নাকি শোনা যায় নানারকম অদ্ভুতুড়ে শব্দ। থিয়েটারের ফ্যান্টম বা চলমান সেই অশরীরী বাস করে সেলারে, প্রতিনিধিত্ব করে অশুভ শক্তির – এরকমই বিশ্বাস এখানকার মানুষের।

৬. সেন্ট জেমস থিয়েটার (ওয়েলিংটন, নিউজিল্যান্ড)
১৯১২ সালে গড়ে ওঠা এই থিয়েটারে দেখা যায় ইউরি নামে এক নারীকে। ইউরি একসময় এখানেই অভিনয় করতেন। ইউরির অবশ্য পরিচিতি আছে বন্ধুত্ববৎসল ভূত হিসেবে। যদিও তার উপস্থিতির সময় ঘন-ঘন বাতি জ্বলতে-নিভতে থাকা, বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটে। আরেকজন আছেন – দ্য ওয়েলিং ওম্যান- যাকে প্রায়ই চিৎকার করে কাঁদতে শোনা যায়। এই প্রেতাত্মাটি একসময় অভিনেত্রী হতে চেয়ে ব্যর্থ হন। আর তাই এখনো আছেন এখানে। তরুণ অভিনেত্রীদের অনেকেই নাকি দেখেছেন একে! অভিজ্ঞতা সুখকর নয়।

৭. অরিয়েন্টাল থিয়েটার (শিকাগো, আমেরিকা)
১৯০৩ সালে প্রতিষ্ঠার সময় কাগজে দেয়া বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, অরিয়েন্টাল থিয়েটার কখনো আগুনে পুড়বে না। এর অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা এতই শক্তিশালী যে, এখানে কখনো আগুন লাগা সম্ভব নয়। কিন্তু নিয়তির কী নির্মম পরিহাস, কয়েকবছর পরই নজিরবিহীন আগুনের লেলিহান শিখায় দগ্ধ হয় থিয়েটারটি। আগুনে পুড়ে মারা যায় প্রায় ছয়শো মানুষ। পুরো ভবনটিই ধ্বসে গিয়েছিল আগুনে। ১৯২৬ সালে আবার নতুন করে গড়ে তোলা হয় ভবনটি। কিন্তু এরপর থেকে প্রায়ই এখানে শোনা যায় অগ্নিদগ্ধ মানুষের আর্তনাদ। বিশেষত, লাশগুলো যেখানে জড়ো করা হয়েছিল সেদিক থেকেই আসে শব্দ।

৮. প্যালেস থিয়েটার (লস এঞ্জেলেস, আমেরিকা)
এর আগে আমরা জেনেছি নিউ ইয়র্কের প্যালেস থিয়েটারের কথা। তবে ভৌতিক কাহিনী প্রচলিত আছে লস এঞ্জেলেসের প্যালেস থিয়েটারকে ঘিরেও। বর্ণবাদী আচরণের কারণে একসময় এখানে কালো মানুষদের প্রবেশের জন্য ছিল আলাদা পথ। তাদের জন্য ছিল সীমিতভাবে সংরক্ষিত কিছু আসন। এখানে দেখা যায় লেইস গাউন পরিহিত এক কালো নারীকে। কেন সে আজও এভাবে ঘুরে বেড়ায় তা অজানা। তবে ধারণা করা হয়, হয়তো গায়ের বর্ণের কারণে এখানে কাজের সুযোগ পায়নি। তাকে নাকি দেখা যায় মঞ্চের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে দৌড়াতে!

৯. ডক স্ট্রীট থিয়েটার (চার্লসটন, দক্ষিণ ক্যারোলিনা)
থিয়েটারটি প্রথম নির্মিত হয়েছিল ১৭৩৬ সালে। বর্তমান ভবনটি ১৮০৯ সালে গড়া। এখানে দেখা যায় নেটি ডিকারসন নামে লাল গাউন পরিহিতা এক নারীর প্রেতাত্মা। নেটি ছিলেন এক পতিতা। থিয়েটার ভবনের তিনতলা থেকে ধাক্কা মেরে নাকি তাকে নিচে ফেলে দিয়েছিল কেউ। আর সেই থেকেই এখানে রয়েছেন তিনি! তিনতলায় এখনো দেখা যায় তাকে। আবার, জুনি ব্রুটাস নামে আরেক অভিনেতাকেও নাকি দেখা গেছে মঞ্চের পর্দা ঠেলে ভেতরে ঢুকতে।

১০. এডেলফি থিয়েটার (লন্ডন, ইংল্যান্ড)
১৮০৬ সালে তৈরি হয়েছিল এই থিয়েটারটি। বর্তমান ভবনটি ১৯৩০ সালের। এই থিয়েটারের সাথে জড়িয়ে আছে এখানকার অভিনেতা উইলিয়াম টেরিসের নাম। ১৮৯৭ সালে এই থিয়েটারেই খুন হন টেরিস।

তার মৃত্যুর আগের দিন রাতে তার প্রক্সি দিতে আসা এক অভিনেতা স্বপ্নে দেখেন খুন হয়েছেন টেরিস, রক্তে ভেসে যাচ্ছে মেক-আপ রুম! পরদিন ঠিক এই ঘটনাই ঘটেছিল! এখনো এডেলফি থিয়েটারে দেখা যায় টেরিসকে, শোনা যায় তার চিৎকার। অনেকেরই হয়েছে এই অভিজ্ঞতা।
Feature Image Courtesy: The Carolina Theatre of Durham
References:
- www.cntravel.com
- www.budgettravel.com