পাথরের যুগ থেকে মানুষ এখন বিজ্ঞানের যুগে। বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষ পৃথিবীর অনেক রহস্যের জাল উন্মোচন করেছে। শুধু এই পৃথিবীরই নয়, পৃথিবীর বাইরেও অসীম মহাকাশে প্রতিনিয়তই নতুন নতুন রহস্যের সন্ধান পাচ্ছে। কিন্তু পৃথিবীতে এমন কিছু রহস্য এবং রহস্যময় স্থান রয়েছে যেগুলোর আজ পর্যন্ত কোনো কূল-কিনারা পাওয়া যায়নি এবং এ স্থানগুলোতে চাইলেই কেউ প্রবেশ করতে পারে না। এমনকি জানা যায় না কি হচ্ছে সেখানে আর কেনোই বা এসব স্থানগুলোকে ঘিরে রয়েছে এতো গোপনীয়তা! মানুষ স্বাভাবিকভাবেই নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি প্রবল আকর্ষণ বোধ করে। আর সেটা যদি হয় কোনো নিষিদ্ধ স্থান, তাহলে তো আর কথাই নেই! মানুষের সেসব স্থানের প্রতি কৌতূহলের শেষ থাকে না। তাই এসব স্থান নিয়ে মানুষের কৌতূহল বেড়ে চলেছে দিনের পর দিন। তবে কেউই সম্পূর্ণভাবে এর রহস্য ভেদ করতে পারেনি। তেমনি পৃথিবীর অন্যতম রহস্যময় এবং নিষিদ্ধ একটি স্থানের নাম ‘এরিয়া ৫১’।
ড্রিমল্যান্ড, প্যারাডাইস রেঞ্চ, হোম বেস এবং ওয়াটার টাউন স্ট্রিপ একই স্থানের চার চারটি নাম। এই চারটি স্থানের অপর নাম এরিয়া ৫১। মার্কিন বিমান বাহিনীর অত্যন্ত গোপনীয় এই ঘাঁটির অবস্থান আমেরিকার নেভাডা অঙ্গরাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলে, যার আয়তন ২৬ হাজার বর্গ কিলোমিটার।
২০১৩ সালের আগ পর্যন্ত এই স্থান সম্পর্কে কারো কোনো ধারণা ছিল না। ছিল না মানচিত্রে সুনির্দিষ্ট কোনো চিহ্ন, এমনকি রাস্তার কোনো নকশা। যার কারণে গুগল ম্যাপও ঠাঁই দিতে পারেনি গোপন সেই স্থানটিকে। এই স্থানকে গোপন করার জন্য মার্কিন সরকার এতোটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল যে কোনো সরকারি কাগজপত্র বা দলিলেও এ সম্পর্কে কোনো তথ্য রাখেনি তারা। নির্দিষ্ট বিমান ছাড়া আকাশসীমায় সামরিক বা বেসামরিক কোনো ধরনের বিমান প্রবেশের অনুমতি নেই। এই ঘাঁটি ‘নো ফ্লাইং জোন’ হিসেবে সরকারি ভাবে ঘোষিত। পাইলটেরা এই এলাকার আকাশকে ‘দি বক্স’ নামে সংজ্ঞায়িত করেন।
এরিয়া ৫১ এমন একটি সরকারি ঘাঁটি যেখানকার কর্মীরা সরাসরি রাষ্ট্রপতির কাছে দায়বদ্ধ থাকে। এরিয়া ৫১ এর মূল গেট ঘাঁটি থেকে প্রায় ২৫ মাইল দূরে অবস্থিত। দুর্ভেদ্য বেষ্টনী ঘেরা এই এলাকায় কেউ প্রবেশের চেষ্টা করলেই তাকে গুলি করা হবে। এই এলাকায় ফটোগ্রাফি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আমেরিকার সবচেয়ে রহস্যময় এ অঞ্চলটি গোপন সামরিক ঘাঁটি বলে সেখানে বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে ক্যামেরা বসানো রয়েছে যাতে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করা যায়। অনেকে বলেন এখানে চলার রাস্তায় নাকি সেন্সর রাখা আছে যার ফলে প্রতিটি পায়ের শব্দ পৌঁছে যায় নিরাপত্তারক্ষীদের কানে।
২০১৩ সালের ১৮ই আগস্ট CIA রিপোর্টে এরিয়া ৫১ সম্পর্কে নথি প্রকাশের আগ পর্যন্ত আমেরিকান সরকার এরিয়াটি সম্পর্কে কোনো নথি বা তথ্য প্রকাশ করেনি। এখানে বর্তমানে ঠিক কোন বিষয় নিয়ে গবেষণা চলছে তা জানার কোনো উপায়ও নেই। তবে খোঁজ নিলে বড়জোর বলা হবে এ ঘাঁটিতে বিভিন্ন এয়ার ক্রাফট ও অস্ত্র ব্যবস্থা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়। শুরু থেকেই গোপনীয়তার দুর্ভেদ্য চাদরে মোড়ানো এরিয়া ৫১-কে নিয়ে রহস্য ঘনীভূত হয়েছে দিনের পর দিন। এরিয়া ৫১ এ যে আসলে কি আছে সেই সম্পর্কে মানুষের ধারণা বেশ কম। এই কম ধারণা থেকেই পরবর্তীতে জন্ম নিয়েছে নানা কল্পনার শাখা-প্রশাখা।
কেউ কেউ বলেন এরিয়া ৫১ এর মাটির নিচে নাকি বিশাল বাঙ্কার গড়ে তুলেছেন মার্কিন সরকার আর সেখানেও রয়েছে প্রযুক্তির অত্যাধুনিক বিমানের আনাগোনা। বিমানগুলো সেখানে লুকিয়ে রাখা হয় যাতে করে স্যাটেলাইটের মাধ্যমেও কেউ সেগুলোর খোঁজ না পায়। কারো মতে বাঙ্কারগুলো নাকি ৪০ তলা ভবনের সমান উঁচু। কেউ কেউ বলেন এলিয়েনদের স্পেস ক্রাফটগুলো নাকি পাহাড়ের নিচে লুকিয়ে রাখা হয়। সেই বাঙ্কারের প্রবেশ পথে রয়েছে বিশাল দরজা যার ডিজাইন আশে পাশের মাটির মতোই করা। ফলে দূর থেকে দেখে একে পাহাড়ের অংশই ভাববে যে কেউ।
১৯৬২ থেকে ১৯৮৩ সালের মধ্যেবর্তী সময়ে ন্যাশনাল ওসিনিক এন্ড এটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (Oceanic and Atmospheric Administration) ঘূর্ণিঝড়ের গতি বেগ কমানোর জন্য কাজ করেছিল। যদিও তাদের সে গবেষণা সফল হয়নি। ফলে এটাও ধারণা করা হয় যে আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নীরিক্ষা চালানো হয়েছিল এরিয়া ৫১-এ।
৫০ এর দশকের শুরুর দিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য অপেক্ষাকৃত নিচু দিয়ে উড়ে যাওয়া বিমান পাঠাতো আমেরিকা। তবে সোভিয়েত বাহিনীর রাডারে সেগুলো ধরা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকতো। অবশেষে ১৯৫৪ সালে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট ডি. আইজেনহাওয়ার এক গোপন প্রজেক্ট চালু করেন। এর লক্ষ ছিল এমন যুদ্ধবিমান বানানো যেগুলো অনেক উচ্চতা থেকেও শত্রুপক্ষের বিভিন্ন বিষয় নজরদারি করতে পারবে। আর আমেরিকা তা-ই করেছিল ইউটু স্পাই প্লেন (U-2 Spy Plane) দিয়ে। এই প্লেন গুলো চালানোর প্রশিক্ষণ ও এর পরীক্ষা -নিরীক্ষা চালানোর জন্য দরকার ছিল লোকালয় থেকে দূরবর্তী গোপন কোনো জায়গা।
শেষ পর্যন্ত নেভাদা মরুভূমির দক্ষিণে গ্রুম লেকের কাছাকাছি এলাকায় সন্ধান মেলে পছন্দনীয় সেই জায়গার। এই জায়গাটি আজ সকলের কাছে এরিয়া ৫১ নামে পরিচিত। ১৯৫৫ সালের জুলাই থেকে ইউটু স্পাই প্লেনের পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন শুরু হয়। মজার ব্যাপার হলো এর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আমেরিকার বিভিন্ন জায়গা থেকে ইউএফও দেখতে পাওয়ার দাবি করতে শুরু করেন অনেকেই। কিন্তু ইউএফও দেখতে পাওয়ার দাবি করতে শুরু করা মানুষে অধিকাংশই ছিলেন বাণিজ্যিক বিমানের পাইলট। সেই সময় বিমান গুলো সাধারণত ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার ফুট উচ্চতা দিয়ে উড়তো। মিলিটারি বিমান গুলো উড়তো ৪০ হাজার ফুট উঁচু দিয়ে। অনেকেই ধারনা করতো যে মানুষের তৈরি বিমান এতো বেশি উঁচু দিয়ে উড়তে পারে না আর ঠিক সেই জায়গাতেই লেগে গেলো গোলমাল!
কারণ ইউটু প্লেনটি উড়ে যেত ৬০ হাজার ফুটেরও বেশি উচ্চতা দিয়ে। ব্যস এখানেই মানুষের মনে ঢুকে গেলো অবিশ্বাস। কেউ কেউ বলা শুরু করে দিলো এটা মানুষের বানানো হতে পারে না। এটা অবশ্যই এলিয়েনদের বানানো কোনো ইউএফও। বিমান বাহিনীর শীর্ষকর্তারা অবশ্য জানতেন যে ইউএফও দাবি করা জিনিস গুলো আসলে তাদের গোপন প্রজেক্টের ইউটু স্পাই প্লেন। কিন্তু এই সত্যটা জনসম্মুখে বলা নিষেধ ছিল। কারণ এটি ছিল একটি টপ সিক্রেট প্রজেক্ট। ফলে লোকমুখে ছড়াতে থাকে ইউএফও দেখতে পাওয়ার ভিত্তিহীন দাবি।
‘৫০ এর দশকের শেষের দিকে ইউটুর অপারেশন স্থগিত করা হলেও এরিয়া ৫১-এ চলতে থাকে অন্যান্য স্টেলথ এয়ার ক্রাফট নিয়ে গবেষণা। এগুলোর মধ্যে ছিল এ-১২ (A-12) এফ- ১১৭এ (F-117A) এবং টাসিট ব্লু (Tacit blue)। ফলে গুজবের ডাল পালার বিস্তৃতি কখনোই থেমে থাকেনি।
এরপরেই আসে ১৯৯৯ সালে বব লাজারের সেই বিস্ফোরক মন্তব্য যা সেখানে কাজ করা ইঞ্জিনিয়ারদের অনেকেই ভালো ভাবে নেননি। লাজার বলেন তিনি কিছু দিনের জন্য এরিয়া ৫১ এরই একটি অংশে কাজ করেছিলেন। যার নাম এস-৪ (S-4)। সেই জায়গাটি এতোটাই গোপনীয় যে ওই প্রজেক্টে তিনি এবং তার অন্যান্য সহকর্মীদের যে বাসে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তার জানালা গুলোও বন্ধ ছিল। যাতে ইঞ্জিনিয়াররা যাতাযাতের রাস্তা মনে রাখতে না পারেন। এস ৪ বিমান ঘাটিতে লাজার এমন সব ফ্লাইং সসার দেখতে পেয়েছিলেন যেগুলো কোনো ভাবেই পৃথিবীতে তৈরি হতে পারে না বলে দাবি করেন তিনি। সেগুলোর শক্তি সরবরাহ করা হতো এন্টিমেটার রিয়্যাক্টরের মাধ্যমে। জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হতো লালচে কমলা বর্ণের একটি পদার্থ। যার নাম এলিমেন্ট ১১৫ (element 115)। সসারটি এতোটাই শক্তিশালী গ্রাভিটি ওয়েভ তৈরি করেছিল যে সেটার দিকে কোনো গল্ফ বল ছুড়ে মারলে সেটাও ফিরে আসছিল।
লাজারের মতে, সামরিক খাতে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে মার্কিন সরকার রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে তৈরি করেছিল ইউএফও। বলা হয়ে থাকে, এলিয়েনদেরও নাকি জেলখানার বন্দিদের মতোই জিজ্ঞেসাবাদ করা হয় এরিয়া ৫১ এ। বির্তকে ছাইয়ের মধ্যে যেন বাতাস ছড়িয়ে দিলেন এরিয়া ৫১ এর কর্মরত পদার্থবিজ্ঞানী বব লাজার।
টিভি সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, একবার যখন তিনি এস-৪ এর একটি হলওয়ে ধরে যাচ্ছিলেন তখন পাশের একটি ঘরের ছোট জানালা দিয়ে সামান্য সময়ের জন্য উঁকি দেন। তখন ঘরের ভেতরের ছোট ধূসর বর্ণের একটি প্রাণীকে সাদা কোট পরিহিত দুজন মানুষের মধ্যে দাড়িয়ে থাকতে দেখেছিলেন তিনি। পরে অবশ্য তার পিছন পিছন আসা প্রহরীর ধমক খেয়ে সেখান থেকে সরে যেতে বাধ্য হন। একবার বন্ধুদের নিয়ে তিনি লুকিয়ে সেসব সসারের টেস্ট ফ্লাইট দেখতে গিয়ে ধরা পড়ে যান। এরপরই তার চাকরি চলে যায়।
এরপর বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় নানা সময়ে রহস্যময় এই জায়গাকে কেন্দ্র করে নানা মুখোরচক খবর বের হলেও সেগুলোকে বরাবরই এড়িয়ে গিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। আসলে এরিয়া ৫১ এর কাজ এখনো বহাল রয়েছে। এখন নাকি সম্প্রসারণেরও কাজ হচ্ছে। তবে এর ভেতরে যে ঠিক কী নিয়ে কাজ চলছে তা বাইরের জগতে বসে অনুমান করা খুবই কঠিন। তবে অনুমান করলেও সেটা সঠিক কিনা তা যাচাইয়ের কোনো উপায় নেই।
প্রায় তিন দশক ধরে এরিয়া ৫১ নিয়ে গবেষণা করা এয়ার স্পেস ইতিহাসবিদ ও লেখক পিটার মার্লিন বলেছিলেন,
“এরিয়া ৫১-এ বর্তমানে উন্নত স্টেলথ টেকনোলজি এডভ্যান্সড এবং আনমেন্ড এরিয়াল ভেহিকল (Unmanned Aerial Vehicle) বা ইউএভি নিয়ে কাজ চলছে।”
আবার ইউটু বিষয়ক ইতিহাসবিদ ক্রিস পোকের মতে, এখন সেখানে বিশেষ ধরনের এয়ারক্রাফট রেডিও কমিউনিকেশনের অত্যাধুনিক কোনো প্রযুক্তি ডিরেকটেড এনার্জি ওপেন এবং লেজার নিয়ে গবেষণা চলছে।
এরিয়া ৫১ কে ঘিরে অসংখ্য কাহিনী প্রচলিত থাকলেও এরিয়া ৫১-এর ওপর সব অভিযোগই সত্য বা ঠিক না-ও হতে পারে। এবার কিছু ঘটনা ও তথ্য সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক যেসব কারণের জন্য পুরো পৃথিবীর কাছে এরিয়া ৫১-এর এতো বদনাম।
তার দাবি আমেরিকার টপ সিক্রেট অঞ্চল, মানে এরিয়া ৫১-এ এলিয়েনদের নিয়ে গবেষণা করার সময় এই ছবি তোলা হয়। এক্সামিনার ওয়েব সাইটের অনুসারে এই ছবি ইউএফও এক্সপার্ট টম কেডিটকে পাঠানো হয়েছিল। তাতে বলা হয় এই ছবি ১৯৪৭ সালে তোলা হয়েছিল।
এই ব্যাপারে ইউএফও এক্সপার্ট টম কেডিট বলেন যে,
“এই ছবিটির সত্যতা যাচাই করার জন্য আমরা নিউইয়র্কের কিছু ইতিহাসবিদদের সাথে দেখা করি। তারা আমাদের জানান যে এই ছবি ১৯৪৭– এ ই তোলা হয় এবং এই ছবিতে কোনো রকম ফটোশপ করা হয়নি।”
এই ছবিটি সত্যিই রহস্যময় যেখানে একটি অন্য গ্রহের প্রাণীকে শুয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে যার উচ্চতা চার ফিট। এই ছবির সত্যতা এখনো পুরোপুরি প্রমাণিত হয়নি।
রসওয়েলে হওয়া ইউএফও দুর্ঘটনা
নিউ ম্যাক্সিকোর একটি শহর রসওয়েল। ২ জুলাই, ১৯৪৭ সালের পর রসওয়েলকে নিয়ে খুব আলোচনা হয়েছিল সারা বিশ্বব্যাপী। কারণ সেদিন আমেরিকার মিলিটারি বেসের কাছে একটি ইউএফও দুর্ঘটনা ঘটে। বার্নাট এরে নামক এক ওয়েল এক্সপ্লোর জিওলোজিস্ট তখন রসওয়েলের মরুভূমিতে কাজ করেছিলেন। সেই সময় এই ইউএফও দুর্ঘটনা ঘটে যা তিনি নিজে চোখে দেখেন।
এফবিআই-এর এক অধিকারী পত্র থেকে প্রমাণিত হয় যে ১৯৫০ এর আগে নিউ ম্যাক্সিকোর রসওয়েলে এলিয়েন এসেছিল। সেটি এফবিআই তাদের অনলাইন রিসোর্স ‘দ্যা ওয়ার্নে’ প্রকাশ করেছিল। এর মধ্যে ২২শে মার্চ ১৯৫০ সালে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত এফবিআই কর্মী গ্রেহোটেট এফবিআই এর ডাইরেক্টরকে লিখেছিলেন, নিউ ম্যাক্সিকোতে এক এয়ার ক্রাফট কর্মী তিনটি ইউএফও দেখেছিলেন। এছাড়া এর মধ্যে এফবিআই এর একটি গোপন ফাইল প্রকাশ করা হয়। যেখানে প্রকাশ করা হয়েছে আমেরিকার পুলিশ এবং সেনাবাহিনী উটাহ রাজ্যে ১৯৫০ সালে একটি ইউএফও নষ্ট হতে দেখেছিলেন। আমেরিকার একটি বড় অংশ মনে করে এই দূর্ঘটনায় এইসব প্রাণীদের দেহাবশেষ পাওয়া গিয়েছিল কিন্তু আমেরিকার অধিকারীরা ঘটনার সত্যতার উপর পর্দা দিয়ে রেখেছে। এসব বিষয়ের পরীক্ষা নীরিক্ষা আজও এরিয়া ৫১ এ চলছে যে কারণে বাইরের কোনো মানুষের এরিয়া ৫১ এ প্রবেশ আজও নিষিদ্ধ।
সিক্রেট গবেষণা
কিছু লোক মনে করেন এরিয়া ৫১-এ সিক্রেট বাঙ্কারে মানুষ এবং এলিয়েনদের নিয়ে গবেষণা করা হয়। যার ফলে প্রচলিত আছে সেখানকার বিজ্ঞানীরা মানুষ এবং এলিয়েনদের সংমিশ্রণে অর্ধেক মানুষ এবং অর্ধেক এলিয়েনদের একটি অদ্ভুত প্রাণী তৈরী করতে সফল হয়েছে৷ বলা হয়, এই প্রাণীটি তৈরী করার জন্য এলিয়েনদের ডিএনএ ব্যবহার করা হয়েছিল যা রসওয়েলের ক্র্যাশ ল্যান্ডিং এ পাওয়া যায়। যদিও এসব এক্সপেরিমেন্টের কোনো প্রমাণ নেই কিন্তু অনেকে এটা মনে করে এই অর্ধেক মানুষ এবং অর্ধেক এলিয়েনদের খবরটি একটি মিথ্যা সংবাদ, যা আমেরিকার সরকার নিজেই প্রচার করেছিল। যাতে সেখানে হওয়া এক্সপেরিমেন্টের গোপনীয়তাকে পুরোপুরি লুকানো যায়।
জিটা রেটিকুলি স্টার সিস্টেম
ইউএফও লজিস্টিদের মতে, রসওয়েলের ওপর ইউএফও আমাদের থেকে ঊনচল্লিশ আলোক বর্ষ দূরে দক্ষিণ মহাকাশে অবস্থিত ডাবল স্টার সিস্টেমের জিটা রেটিকুলির কোনো একটি গ্রহ থেকে এসেছে। আমেরিকার ওহাইওর এক শিক্ষক ১৯৭০ সালে জিটা রেটিকুলিকে ইউএফও ঘটনার সাথে সম্পর্কিত করেন৷ মার্ক জুরোফিস নামের ওই স্কুল শিক্ষকের দাবি ছিল যে তিনি ১৯৬১ সালে হওয়া ইউএফও অপহরণ ঘটনার একটি মানচিত্র তৈরী করেছেন। ইউএফও অপহরণ হলো সেইসব ঘটনা যেখানে মানুষেরা দাবি করেছে যে অন্য গ্রহের ইউএফও এসে তাদেরকে নিজের বাড়ির থেকে বা অন্য কোনো স্থান থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ইউএফওতে রাখে। এরপর রিসার্চ চালায় তারপর আবার ফিরিয়ে দেয়। তারাই প্রকাশ্যে এসে জানায় যে তারা ইউএফও দ্বারা অপহরিত হয়েছিল।
এই ঘটনাগুলি আসলেই খুব বিতর্কিত। কারণ বেশিরভাগ মানুষই তা বিশ্বাস করে না। কিছু মানুষ তা বিশ্বাস করে। তবুও তাদের কথায় কিছু কিছু প্রাসঙ্গিকতা থাকে। যেমন ১৯৬১ সালের অপহরণের ঘটনাটিতে অনেক প্রাসঙ্গিকতা ছিল যে কারণে এই ঘটনাটিকে বিজ্ঞানীরা একটু গুরুত্বের সাথে নিয়েছিল।
১৯৬১ সালে এলিয়েন অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া প্রথম ঘটনা সম্পাদক জন ফিলার সবার নজরে আনেন। সেখানে দাবি করা হয় নিউ ইংল্যান্ডের এক দম্পতিকে এলিয়েন তুলে নিয়ে গিয়েছিল এবং ইউএফও তে তাদের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা হয়। প্রশাসন এই ঘটনার সত্যতা জানার জন্য দাবিকৃত মহিলা যার নাম বেটি হিল, তাকে হিপনোটাইজ করে। তখন মহিলাটি একটি স্টার ম্যাপের স্কেচ বানিয়েছিল। তার দাবি ছিল যে তিনি মহাকাশের তারা গুলোকে এই এলিয়েন স্পেস শীপের ভিতর দিয়েই দেখেছিল। এই মহিলাটি স্কেচটি তৈরি করেছিল ১৯৭০ সালে যখন কম্পিউটার প্রযুক্তি এতোটা উন্নত ছিল না।
তাই এই কাহিনীতে আকৃষ্ট হয়ে পড়া ওহাইও-এর এক স্কুল শিক্ষক লোহার তার এবং মতি দিয়ে একটি স্টার মডেল তৈরি করেন এবং তা দিয়ে মহাকাশে এলিয়েনদের বাড়ির ঠিকানা খোঁজার গবেষণা শুরু করেন। এবং শেষ অবধি সৌভাগ্যবশত তার একটি স্টার মডেল দক্ষিণ মহাকাশে অবস্থিত জিটা রেটিকুলির সাথে মিলে যায়। তখনই আবার ইউএফও এর উপর আগ্রহী মানুষের জন্য নতুন করে একটি ভাবনার বিষয় চলে আসে। কারণ এই মহিলার অতটা বেশি স্টার সিস্টেম সম্পর্কে জানা তখন অসম্ভব ছিল। তাই যারা ইউএফও বিশ্বাস করে এই ঘটনা তাদের কাছে বিশ্বাসের সব সীমা অতিক্রম করেছিল।
যেকারণে রসওয়েলে ইউএফও ঘটনা ও এর সাথে যুক্ত হয়ে যায় কিন্তু আমাদের চেয়ে ঊনচল্লিশ আলোকবর্ষ দূরে ওই স্টার সিস্টেমে কোনো প্রাণীর সৃষ্টির প্রমাণ তো দূরের কথা, কোনো গ্রহের উপস্থিতিরই প্রমাণ পাওয়া যায়নি আজ অবধি।
বয়েড বুসম্যানের কনফেশন
এরিয়া ৫১-এর উপর উঠা সব অভিযোগগুলোর মধ্যে সব থেকে বিতর্কিত অভিযোগ হলো বয়েড বুসম্যানের। ২০১৪ সালে বয়েড বুসম্যান নামক একজন ব্যাক্তি তার বয়ান রেকর্ড করেন। বুসম্যানের দাবি ছিল তিনি প্রথমে এরিয়া ৫১ এর একজন এয়ার স্পেস ইঞ্জিয়ার পদে কাজ করতেন।
এই বয়ানে তিনি স্বীকার করেন যে এরিয়া ৫১ এ এমন কিছু শেল্টে তিনি কাজ করেছিলেন যেখানে ইউএফও এবং এলিয়েন সংক্রান্ত প্রজেক্ট ছিল। বুশম্যান সেসব সিনিয়র সাইনটিস্টদের মধ্যে একজন ছিলেন যারা অত্যাধুনিক এডভান্স এয়ার ক্রাফট কনসেপ্টের উপর কাজ করেছিল। এই পজিশনের সুবিধার জন্যই এরিয়া ৫১ এর অন্যান্য সিক্রেট সাইডে যাওয়ার অনুমতি ছিল। তার বয়ানে আজব এবং হয়রান করে দেওয়া অংশটিতে তিনি দাবি করেন যে এরিয়া ৫১ এর সিক্রেট অংশে কাজ করা স্টাফদের মধ্যে সাইনটিস্টরা ছাড়াও কিছু এলিয়েনদের কাজ করতে দেখেছিলেন তিনি যাদের বয়স ২০০ বছরেরও বেশি ছিল। তিনি তাদের সাথে কাজও করেছেন। তার মতে তারা নিজেদের গ্রহ থেকে যাত্রা করে পৃথিবীতে আসতো। ইউএস সরকার একে ওয়াইন দুনিয়া বলে।
এসব এলিয়েন ৫ ফিট পর্যন্ত লম্বা ছিল। ওদের লম্বা লম্বা আঙ্গুল ছিল এবং জ্বল জ্বল করা দাঁতও ছিল। তার মতে, এই এলিয়েনরা মানুষের চেয়ে অনেক বেশি বুদ্ধিমান। তারা নিজেদের মধ্যে কোনো মাধ্যম ছাড়াই কথা বলতে পারতো। বুশম্যান আরও জানান তারা এক ৩৮ ফিট ডায়ামিটর ইউএফও এর উপর কাজ করেছিলেন। যা তৈরি হয়েছিল এন্টি গ্রাভিটি টেকনলোজি দিয়ে। বুশম্যানের এই বয়ানগুলো কেউ কেউ সত্যি মনে করে আর কেউ কেউ মিথ্যা। যদিওবা ইউএস গভমেন্ট অস্বীকার করেছে যে বুশম্যানের এরিয়া ৫১-এ কাজ করতো।
এরিয়া ৫১ এর রহস্য আজও ভেদ করা সম্ভব হয়নি কারণ এরিয়া ৫১ সেই সকল স্থানের মধ্যে একটি যেখানে সব থেকে বেশি গার্ড রয়েছে। পৃথিবীর যত ক্ষমতাসীন ব্যক্তি হোক না কোনো সেখানে যাওয়া নিষিদ্ধ৷ কিন্তু এরিয়া ৫১ কে যদি এলিয়েনদের থেকে আলাদা করা হয় তাহলে যে ব্যাপারটা সামনে আসবে সেটা হলো ইউএস গভমেন্ট এই স্থানটিকে অত্যাধুনিক এয়ার ক্রাফট তৈরিতে ব্যবহার করেন এবং সেটা সম্পূর্ণ গোপনীয়তার সাথে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফি বা ডিসকভারি বা অন্যান্য যে সেকল চ্যানেল এরিয়া ৫১-কে নিয়ে ডকুমেন্টরি বানিয়েছে তাদের মতে এরিয়া ৫১ শুধুমাত্র একটি মিলিটারি প্রজেক্টের অংশ অথচ তারা আজও এরিয়া ৫১ কে রহস্যের চোখেই দেখে।
Feature Image Courtesy: wxyzdetroit.com
References:
- Britannica.
- CNN
- Business Insider
- CIA