সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই যে ব্যাপারটি আপনার মাথায় ঘুরে সেটি অবশ্যই সকাল বেলার নাস্তার টেবিলে কি থাকছে সেই ভাবনা। মাঝে মাঝে উঁকিঝুঁকি মেরে দেখেও আসেন নিশ্চয়ই। তবে স্বভাবতই বাঙ্গালীরা রুটি-পরোটা দিয়েই প্রাতঃরাশ সারতে অভ্যস্ত। ব্যতিক্রম ও রয়েছে। কর্নফ্লেক্স-দুধ ও ইদানিং বেশ জনপ্রিয়। অনেকে আবার সকাল বেলাতেও ভাত খাওয়ার লোভ সামলাতে পারেন না। তবে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় প্রাতঃরাশ কোনগুলো?
ইতিহাস সংস্কৃতি ভেদে বিভিন্ন দেশের খাবার বিভিন্ন হলেও সবমিলিয়ে জনপ্রিয় খাবারের নাম বলাই যায়। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্য প্রতি দশক হিসেব করেই বলা শ্রেয়তর। কোন দশকে কোন খাবারটি প্রাতরাশ হিসেবে বেশি জনপ্রিয় ছিল? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই না হয় শুরু করা যাক।
১৯৫০ – প্যানকেক
বর্তমানেও স্ন্যাকস হিসেবে প্যানকেকের কদর বেশ চওড়া। তবে ৫০ এর দশকে এর জনপ্রিয়তা ছিলো তুঙ্গে। মূলত খুব কম সময়ের মধ্যে প্যানকেক তৈরী করা কিংবা খাবারের স্বাদ বিবেচনাতেও যথেষ্ট সুস্বাদু হওয়াতেই এই জনপ্রিয়তা ছিলো। আর সাথে মধু যোগ করে দিলে তো কথাই নেই। এখনোও অনেক দেশেই ব্রেকফাস্টের টেবিলে দেখা মিলে প্যানকেকের। মূলত ডিম দুধ আর ময়দা দিয়েই তৈরী হয় প্যানকেক। সাথে চাইলে যোগ করতে পারেন কলার টুকরাও।

১৯৬০ – এগ বেনিডিক্ট
প্রাতরাশ না বলে ব্রাঞ্চ বললেও চলে। বলা যায় ব্রাঞ্চ হিসেবে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা এগ বেনিডিক্টের দখলে। তবে ৬০ এর দশকে ছিলো উল্টো চিত্র। তখন মানুষ সকাল বেলার নাস্তা হিসেবেই দেখতে চাইতো এগ বেনিডিক্ট। ব্রেড, টমেটো, বেকন ও ডিম দিয়ে তৈরী এই খাবারটি বানাতে তেমন একটা বেগ পোহাতে হয় না। তবে সুন্দর ভাবে পরিবেশন বেশ সময় সাপেক্ষে। যার জন্য বর্তমানে এগ বেনিডিক্ট খাবারটি হয়ে গেছে রেস্টুরেন্টের খাবার। বাসায় খুব কমই মানুষকে এই রেসিপি বানাতে দেখা যায়।

১৯৭০ – ক্রেপস
৭০ এর দশকে আমেরিকানরাই বেশ জনপ্রিয় করে তোলে এই রেসিপিটি। মূলত ফ্রেঞ্চ ভাষায় এই খাবারের উচ্চারণ আদতে ‘ক্রেপে’। কিন্তু সাধারণত ইংলিশ উচ্চারণে ক্রেপস ই বলা হয়ে থাকে। ৭০ এর দশকে ইউরোপিয়ান খাবারের সংস্পর্শে এসে আমেরিকানরা মজে যায় ইউরোপিয়ান রেসিপিতেই। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলো এই ক্রেপস। দুধ, ডিম, বাটার আর ময়দা দিয়ে বানানো এক ধরনের পিঠাকে কলা, বেরি আর মধু দিয়ে পরিবেশিত খাবারই পরিচিত ক্রেপস নামে। এই খাবারটি এতটাই জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলো যে ম্যাজিক প্যান নামের এক রেস্টুরেন্ট চেইন এর আবির্ভাব হয় এই ক্রেপস খাবারের জন্যই।

১৯৮০ – কুইচি
কুইচি অনেকটা পাই ক্রাস্টের মতোই। আশির দশকে সকালের নাস্তার টেবিলে এর জনপ্রিয়তা ছিলো তুঙ্গে। সাধারণত ক্রাস্টের উপর ডিম, ব্রকোলি, মোজারেলা, চিজ দিয়ে বেক করে তৈরী করা হয় কুইচি। অনেকে পিজ্জার সাথে তুলনা করলেও পিজ্জা থেকে বেশকিছু দিক থেকেই আলাদা কুইচি। পিজ্জাতে মাশরুম কিংবা মাংস ব্যবহার করা হলেও সকালের নাস্তা হিসেবে কুইচি ভারী কোনো খাবার দেওয়া থাকেনা। তবে পর্যাপ্ত পরিমান প্রোটিনের যোগান দেয় ডিম আর দুধ। তাই ব্রেকফাস্টের টেবিলে কুইচি ছিলো বেশ কার্যকরী খাবার।

১৯৯০ – চিকেন এন্ড ওয়াফল
চিকেন আর ওয়াফলস এর প্রচলন অনেক আগে থেকে হলেও এর প্রসার তুঙ্গে উঠে নব্বই এর দশকে। নরম তুলতুলে ওয়াফলস এর সাথে মিষ্টি সিরাপ আর ক্রিসপি চিকেন এর সমন্বয় বেশ ভালো ভাবেই জমে যায়। আর তাতে ব্রেকফাস্টের টেবিলেও এর পরিমান বাড়তে থাকে। তবে অন্যান্য ব্রেকফাস্টের তুলনায় খাবারটি বেশি ক্যালরি বহন করে। মূলত সিরাপ আর চিকেনের উপস্থিতির জন্যই। নব্বই এর দশকে আমেরিকানরা ছাড়া ইউরোপেও বেশ জনপ্রিয় ছিলো এই ব্রেকফাস্ট।

২০০০ – বারিতোস
বারিতোস কে না চিনে! জনপ্রিয় এই মেক্সিকান খাবারের প্রসার মূলত আমেরিকার হাত ধরেই। আরো সুনির্দিষ্ট ভাবে বলতে গেলে চিপটোলের হাত ধরে। বিশ্বের সেরা দশ চেইন রেস্টুরেন্টের একটি চিপটোলে যে বিখ্যাত এই মেক্সিকান বারিতোসের জন্যই। একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে এসে দুনিয়া জোড়া খ্যাতি পায় বারিতোস। চিজ, বেকন, ডিম, হ্যাশ ব্রাউন, পেয়াজ দিয়ে রুটির ভেতর পুরে দেওয়া খাবারটি অনেকে শর্মার সাথে তুলনা করতে পারেন। তবে বারিতোসের আলাদা এক ধাঁচ রয়েছে। যার জন্যই এটি লাভ করেছে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি। ২০০০ সালের প্রথম দশকে এটি জনপ্রিয় ব্রেকফাস্ট ছিলো বলে ভাববেন না বর্তমানে এর জনপ্রিয়তা কমে গিয়েছে। বরং স্ন্যাকস, আড্ডায়, বিকালের নাস্তায় বারিতোসের দাবি এখনো গগনচুম্বী।

২০১০ – আভোকাডো টোস্ট
কোনো সন্দেহ ছাড়াই বর্তমানের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রাতরাশের মেন্যুর নাম বললে সবার প্রথমেই আসবে আভোকাডো টোস্টের কথা। কাল্ট রেসিপিতে পরিণত হওয়া এই খাবার একদিকে যেমন সুস্বাদু তেমনি অপরদিকে সুস্বাস্থ্যের জন্যও সমানভাবে কার্যকর। টোস্টের উপর আভোকাডো সাথে টমেটো, পেয়াজ, ডিম দিয়ে মূলত পরিবেশন করা হয় এই টোস্ট। আর এই আভোকাডো টোস্ট শুধু ইউরোপ আমেরিকাতেই জনপ্রিয় নয়; এশিয়া এমনকি বাংলাদেশেও অনেকে প্রাতরাশ সারেন আভোকাডো টোস্ট মুখে পুরেই।

খাদ্যরসিক মানুষজন সময়ের সাথে সাথে খাবারকেও প্রতিনিয়ত পরিবর্তন করেছে। বর্তমানে প্রযুক্তি কিংবা যেকোনো জিনিসের সহজলভ্যতা মানুষকে খাবার নিয়ে পরীক্ষা করতে আরো আগ্রহী করে তুলেছে। যার ফলাফল আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রতিনিয়তই। প্রক্রিয়াজাত খাবারের পরিমাণ বাড়ছে দেদারসে। তাই একই উপাদান দিয়ে নানান রকমের রেসিপি দেখা যাচ্ছে। সেহেতু বর্তমানে এককভাবে জনপ্রিয় খাবারের সন্ধান করা বেশ কষ্টসাধ্য। বরং প্রতিনিয়তই মানুষ উপভোগ করতে চায় নতুন নতুন খাবার।
Feature Image Courtesy: newsviews.media