১২ জুলাই, ২০১৬

গুলশান, ঢাকা

কলেজ ছাত্র তাসিন (কাল্পনিক নাম) ডিনারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। হঠাৎ তার বাবাকে ফোন দেন তার এক বন্ধু, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের অফিসার তিনি।

ভাই, আপনার ছেলে বাসায় না? ওকে দেখে রাখেনগুলশানে জঙ্গি হামলা হয়েছে, অবস্থা খুব খারাপ

খবরটা পেয়েই তাসিন ফিরে গেল তার শৈশবে। তার মনে পড়ল শায়েখ আবদুর রহমানকে গ্রেফতারের জন্য নাটকীয় অভিযানের কথা। তার বাবার রমনা বটমূলের বোমা হামলা থেকে বেঁচে ফেরার কথা। টিভিতে দেখা একুশে আগস্টের বিস্ফোরিত অবিস্ফোরিত গ্রেনেড আর রক্তে ভেজা মানিক মিয়া এভিনিউয়ের কথা। তাহলে কি সেই নারকীয় দিন আবার ফিরে এসেছে দেশে?  

হলি আর্টিজান বেকারিতে একদল জঙ্গি আক্রমণ করেছিল। খবরটা বুনো আগুনের মত ছড়িয়ে পরেছিল সারাদেশে। দেশি ও বিদেশি ২০ জন নাগরিককে হত্যা করেছিল জঙ্গিরা। পরেরদিন আর্মাড পার্সোনাল ক্যারিয়ার দিয়ে দেয়াল ভেঙে আর্মি কমান্ডোদেরা রূদ্ধশ্বাস অভিযান চালিয়েছিল।


বাংলাদেশ বরাবরই শান্তিপূর্ণ দেশ ছিল। তাহলে কেন আসবে এদেশে জঙ্গিবাদ? আর দেশে জঙ্গিবাদ এল-ই বা কিভাবে?

সংগঠিত জঙ্গিবাদ এদেশের মাটিতে কিভাবে এসেছে – তা জানতে হলে চলে যেতে হবে আশির দশকে, যখন বাটারফ্লাই ইফেক্ট ভিত কাপিয়ে দিচ্ছিল পৃথিবীর বাম রাজনীতির কেন্দ্রভূমি সোভিয়েত ইউনিয়নের। বলছি আফগান–সোভিয়েত যুদ্ধের সময়ের কথা।

জঙ্গিবাদের প্রথম ওয়েভ বাংলাদেশে আসে সেই সময়েই।

সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানের মাটিতে তাদের প্রভাব বজায়ে রাখার জন্য কাবুলের কম্যুনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিল। এ সরকারকে সাহায্য করার জন্য রেড আর্মির ৪০তম আর্মিকে মোতায়েন করা হয় আফগানিস্তানে। শুরু হয় আফগানদের প্রতিরোধ। এ প্রতিরোধে শামিল হয় সারাবিশ্বের প্রায় ৩৫ হাজার নন- আফগান মুসলিম। সিআইএ এর সহায়তায় ওসামা বিন লাদেন গড়ে তোলেন আরব ব্রিগেড। ২০০০ সৈন্যের এই আরব ব্রিগেড পরে হয় আল-কায়দা। ফিলিস্তিনি ধর্মপ্রচারক আবদুল্লাহ আযযাম তার অগ্নিকণ্ঠে জিহাদী আগুন জ্বালিয়ে দেন আমেরিকা থেকে বাংলাদেশ সবখানে। মার্কিন ও সৌদী অর্থায়নে এই মুজাহিদীন যুদ্ধে নামে আফগানিস্তানের রুক্ষ পাহাড় আর মরুভূমির বুকে।

আফগান মুজাহেদীন; Image Courtesy: Arabnews.com

মুজাহেদীনদের দলে শামিল ছিল প্রায় ৩০০০ বাংলাদেশি। ঢাকার রাস্তায় তখন প্রায়ই “আমরা হব তালিবান, বাংলা হবে আফগানিস্তান” স্লোগানে মিছিল বের হত। এই ৩০০০ মুজাহেদিন বিপুল বিক্রমে আফগান যুদ্ধের বিপ্লবকে বাংলাদেশে রপ্তানি করার দায়িত্ব নেয়। এদেশের মাটিতে আসে জঙ্গিবাদ।

জঙ্গিবাদের প্রথম ওয়েভ

আফগান ফেরত তিন যোদ্ধা মুফতি আবদুর রউফ, মাওলানা আবদুস সালাম আর মুফতি  আবদুল হান্নান শেখ  তৈরি করেন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ, যা সংক্ষেপে হুজি। হুজির কেন্দ্র ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামে। এর একজন নেতা মুফতি ফজলুর রহমান ১৯৯৮ সালে ওসামা বিন লাদেনের পশ্চিমা শক্তি বিরোধী জিহাদের ফতোয়ায় সই করেন। ১৯৯৯ সালে হুজি কবি শামসুর রাহমানকে হত্যার চেষ্টা চালায়। যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালিয়ে দশজনকে হত্যা করে। ২০০২ সালে তারা কলকাতার আমেরিকান সেন্টারে হামলা করে চার পুলিশ ও একজন সিকিউরিটি গার্ডকে হত্যা করে। হামলা করা হয় রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে। ২০০৪ সালের মে মাসে সিলেটে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর বোমা হামলা চালায় এরা। হযরত শাহজালালের মাজারে এদের বোমা হামলায় ৩ জন নিহত ও ৭০ জন আহত হন।

হুজির সবচেয়ে বড় অপারেশন ২০০৪ সালের ২১ শে আগস্টে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ওপর বোমা হামলা। এতে ২০ জন নিহত হয়। শেখ হাসিনাও আহত হন। তার শ্রবণশক্তি স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নিহত হন আওয়ামী লীগের নেত্রী আইভি রহমান সহ ২৪ জন। আহত হন ৩০০ এর বেশি মানুষ।

২০০৪ সালে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা; Image Courtesy: Prothom.com

২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়াকে হত্যার পেছনেও ছিল হুজি। ১৯৯৯ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে হুজি উত্তরবঙ্গ, খুলনা, বাগেরহাট এবং আখাউড়ায় আরো কিছু হামলা চালায়।

হুজির পতাকা; Image Source: Wikipedia

হুজি দেশের বাইরেও অপারেশনের সাথে জড়িত ছিল। ভারতের নয়াদিল্লি ও ব্যাঙ্গালোরে হামলার সাথে হুজির সম্পৃক্ততার কথা জানিয়েছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা। মুম্বাইয়ের তাজ হোটেলে হামলার সাথে হুজির সম্পর্ক ছিল বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলাগুলো পরিচালনা করেছিল জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ বা জেএমবি। এদের সামরিক শাখা জাগ্রত মুসলিম জনতা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৮ সালে। ২০০০ সাল থেকে জেএমবি দেশের পশ্চিমাঞ্চলে কার্যক্রম শুরু করে। দ্রুত তা ছড়িয়ে যা চট্টগ্রাম, সিলেট ও উত্তরবঙ্গে। এর প্রধান সংগঠক ছিল শায়খ আবদুর রহমান। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সাত মিনিটের মধ্যে বাংলাদেশের ৬৩ জেলায় একসাথে ৪৫৯টি বোমা হামলা চালায় জেএমবি। এছাড়া ২৯ নভেম্বর গাজীপুর আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবী সেজে বোমা হামলা করে জেএমবি; মারা যান দুই বিচারক ও দুই আদালত কর্মকর্তা। চট্টগ্রাম আদালতে বোমা হামলা করলে মারা যান এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয়জন।

জেএমবির লোগো সম্বলিত ছবি; Image Courtesy: dailyhunt.in

জেএমবি আর হুজির মাঝে মৌল পার্থক্য ছিল তাদের রিক্রুটমেন্ট লাইনে। হুজি মূলত ছিল কওমী মাদরাসার শিক্ষার্থীদের সংগঠন। জেএমবি ছিল উত্তরবঙ্গের আহলে হাদীস সেক্টের মতাদর্শে বিশ্বাসী। ১৯৯৪ সালে ওয়াহাবি ভাবধারায় বিশ্বাসী আহলে হাদীস আন্দোলন শুরু করেছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আসাদুল্লাহ গালিব।

অধ্যাপক আসাদুল্লাহ গালিব; Image Courtesy: Wikipedia Bangla

স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন প্রথম দিকে বুঝতে পারেনি জঙ্গিবাদের ভয়াবহতা। জঙ্গিদের আস্তানা দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশে সত্তরের দশক থেকেই সর্বহারা পার্টির আধিপত্য ছিল। জঙ্গিদের এন্টি-কম্যুনিস্ট শক্তি হিসেবে প্রথম প্রথম বিবেচনা করছিল প্রশাসন। সর্বহারাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয় জঙ্গিদের। এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামে জঙ্গি ঘাঁটি থেকে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী উলফাকে অস্ত্র সরবরাহ করার মাঝেও দেশের তৎকালীন অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতার মদদ ছিল বলে ধারণা করা হয়, যা থেমে যায় দশ ট্রাক অস্ত্র ধরা পড়ার পর।

প্রথম দিকে সরকার জঙ্গিদের অস্তিত্ব নিয়ে অস্বীকৃতি জানায়। কিন্তু ২০০৪-০৫ সালের এই ভয়াবহ আক্রমণগুলোর পর সরকার বুঝতে পারে, জল গড়িয়ে গেছে অনেকদূর। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দাবি করেন, এসবের পিছে কলকাঠি নাড়ছে র এবং মোসাদের মত গোয়েন্দা সংস্থা। অতঃপর ২০০৪ সালে সরকারের পক্ষ থেকে এলিট কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট হিসেবে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) গঠন করা হয়। আবদুর রহমান এবং বাংলাভাইসহ জেএমবির নেতৃস্থানীয় বেশিরভাগ নেতাকে গ্রেপ্তার করে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এছাড়াও ৭৪৩ জন জঙ্গিকে গ্রেফতার করে বিচার করা হয়। এরপর সাময়িকভাবে দেশে ঝিমিয়ে আসে জঙ্গিবাদ।

জঙ্গিবাদের দ্বিতীয় ওয়েভ

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় এসে যুদ্ধপরাধীদের বিচারকার্য শুরু করে। ২০১৩ সালে বিখ্যাত বক্তা মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে শাস্তি দেয়ার পর দেশে শুরু হয় ব্যাপক অরাজকতা। সাঈদীর ভক্তরা রাস্তায় নেমে ‘দাঙ্গা’ বাধিয়ে দেয়, মারা যায় প্রায় ৫৬ জন, মতান্তরে ৭০ জন।

দেশে একটা সেন্টিমেন্ট সৃষ্টি হয়- ‘সরকার ইসলামবিরোধী’।

আরেকজন আসামী আবদুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলে শাহবাগে আন্দোলন শুরু করে প্রগতিশীল সমাজ। তাদের দাবি, সকল যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি চাই। এই শাহবাগ চত্বরে আন্দোলনকারীদের মূল সংগঠক ব্লগার রাজীব হায়দারসহ অন্যান্যদের নামে নাস্তিকতা ও ইসলামবিদ্বেষের অভিযোগ ওঠে। এসব ব্লগারদের বিচার চেয়ে গঠিত হয় হেফাজতে ইসলাম নামক সংগঠন। তারা মোট ৮৪ জনের বিরুদ্ধে ইসলামবিদ্বেষের অভিযোগ এনে তাদের বিচার দাবি করে। এমন সময়ই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে নতুন জঙ্গিগোষ্ঠী আনসারুল্লাহ বাংলা টিম(এবিটি)। এই এবিটি আল-কায়েদার শাখা। শাহবাগ আন্দোলন শুরু হবার দশ দিন পরে রাজীব হায়দারকে নিজ বাসভবনের সামনে কুপিয়ে হত্যা করে তারা।

আনওয়ার আল-আওলাকী ছিলেন মার্কিন নাগরিক। ইয়েমেন আল-কায়েদায় অংশ নেয়া এই জিহাদী বক্তার কথায় আকৃষ্ট হয়ে গড়ে উঠেছিল একটা অনলাইন কমিউনিটি। সেই কমিউনিটির একজন ছিলেন ঢাকার বসিলা এলাকায় অনলবর্ষী বক্তা জসিমউদদীন রাহমানী। তার কথায় আকৃষ্ট হয়ে গড়ে ওঠে এবিটি, পরে এর নামকরণ করা হয় আনসারুল ইসলাম। এই দলের লক্ষ্য ছিল হেফাজতে ইসলামের তালিকার ৮৪ জনকে হত্যা করা। দেশে যত বিদেশি নাগরিক আছে, সবাইকে হত্যা করে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করা। একে একে কয়েকজন ব্লগার ও বিদেশি নাগরিক হত্যা করে এই এবিটি। এবিটির মূল সংগঠক ছিলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজওয়ানুল আজাদ রানা। মূলত তিনিই ব্লগারদের হত্যার প্ল্যান তৈরি করেন। আরেকজন হোতা জুন্নুন শিকদারও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। ২০১৩ সালে গ্রেফতারের পর সে ২০১৪ তে জামিন পায়। জামিন পাবার পরই রানার সাথে সে মালয়েশিয়ায় পালিয়ে যায়। সেখান থেকে আইএস এ যোগ দেয় সে।

আনসারের সামরিক উইং এর নেতা ছিলেন মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক। ২০১২ সালে সেনাবাহিনীতে একটি ব্যর্থ ক্যু হয়। তাতে জড়িত থাকার অভিযোগে ১২ জন অফিসার বরখাস্ত হয়, মেজর জিয়াউল হক তাদের একজন। ২০১৫ সালে তার বাড়ি থেকে অস্ত্রসহ সাত জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়।

কিন্তু সবচেয়ে বড় আঘাত আসে ২০১৬ সালের পয়লা জুলাই নব্য জেএমবি’র কাছ থেকে হলি আর্টিজানের হামলায়। পাঁচজন জঙ্গি গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা করে ২৯ জনকে হত্যা করে।

হোলি আর্টিজান বেকারি; Image Courtesy: thedailystar.net

এই হামলায় আইএসের বাংলাদেশি যোদ্ধাদের সাথে এদেশের জঙ্গিদের যোগসূত্র স্থাপন করে দেয় কানাডিয়ান বাংলাদেশি তামিম চৌধুরী। তামিম চৌধুরী মূলত সমস্ত প্ল্যানিং ও সমন্বয় করে দেন। দুই মাস আগে আইএসের অনলাইন ম্যাগাজিন দাবিকে তামিম চৌধুরী হোলি আর্টিজান হামলার পুরো ভবিষ্যত কর্মপন্থা প্রকাশ করে। তামিম অক্টোবর, ২০১৩ সালে গঠন করেছিল জুনুদ আল তাওহিদ আল খিলাফাহ। এ দলটিই পরবর্তীতে জেএমবি’র একটা উইংএর সাথে মার্জারের পর আইএসের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে। এর ছিল দুটো  উইং; একটা গাজীপুরে আরেকটা ঢাকার মিরপুরে। মিরপুরের ঘাটিতেই ট্রেনিং হয়, অস্ত্রও ভারতের মুঙ্গের থেকে এসে পৌছায় এই মিরপুরেই। যদিও নব্য জেএমবি’র আমির সালাউদ্দিন বলেছে, তার সংগঠনের সাথে আইএসের যোগ নেই, কিন্তু আইএসের বাংলাদেশি যোদ্ধারা মূলত নব্য জেএমবি’র অধীনে কাজ করে। ২০১৬ সালে এক বন্দুকযুদ্ধে মারা যায় তামিম।

তামিমের এই নব্য জঙ্গিগোষ্ঠী ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৭ সালের জুলাই পর্যন্ত ৩০ টি জঙ্গি হামলা করেছে; এমনটাই দেখানো হয়েছে আইএসের ম্যাগাজিন রুমিয়াতে। একটা ইনফোগ্রাফে দেখানো হয়; কেবল ২০১৫-১৬ সালেই এক বছরে ২৪ টি হামলা করেছে তারা। এর মাঝে ৪২% ক্ষেত্রে টার্গেট ছিল হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা, ২৭% খ্রিস্টান, ১৯% নাস্তিক ও ১২% শিয়া। তাদের হাতে মারা যান রাজীব হায়দার, বইমেলায় কুপিয়ে মারা হয় লেখক অভিজিৎ রায়কে, অফিসে ঢুকে কোপানো হয় দীপনকে। হামলা চালানো হয় ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিনের ওপরেও। অধিকাংশ ব্লগার দেশ ছেড়ে চলে যান বিদেশে। এছাড়া শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতে হামলা করা হয়। হোসেনী দালানে হামলা করা হয়।

ব্লগার রাজিবের লাশ নিয়ে হাজারো জনতা; Image Courtesy: AP

বাংলাদেশ থেকে জঙ্গি রিক্রুটমেন্ট হয় মূলত অনলাইন প্ল্যাটফর্মে। এই কাজ করেছিল কিয়োটোর রিতসুমাকান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সাইফুল্লাহ ওজাকি। তার পূর্ব নাম ছিল সুজিত দেবনাথ, জাপানে গিয়ে সে ধর্মান্তরিত হয়। এদেশে তার প্রতিনিধি ছিল সারোয়ার জাহান। মোট ২৮-৩০ জন বাংলাদেশি যোগ দেয় আইএসে। এর মাঝে ছিল সুজন, এক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ব্যবসায়ী। সে ছিল আইএসের মূল আইটি এক্সপার্ট, ২০১৪ সালে রাক্কায় বিমান হামলায় মারা যায় সে।

জঙ্গিবাদের এই দ্বিতীয় ওয়েভ ছিল প্রথমটার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। প্রথম ওয়েভে বেশিরভাগ জঙ্গি ছিল প্রান্তিক কওমী মাদরাসার ছাত্র। কিন্তু দ্বিতীয় ওয়েভ টেনে আনে অভিজাত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ধনী পরিবারের সন্তানদের। এই দলগুলোর মাঝে ছিল ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার, স্থপতি, আইটি এক্সপার্ট, সঙ্গীতশিল্পী এমনকি র‍্যাম্প মডেল। গ্রেফতার হওয়া ছেলেদের পিতৃপরিচয়ের মাঝে ছিল আমলা, সেনা কর্মকর্তা, সরকারি দলের রাজনীতিবিদ এমনকি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা। জঙ্গিবাদ এভাবেই ঢুকে গেছিল সমাজের সচ্ছল আর অভিজাত শ্রেণীতে।

বাংলাদেশ সরকার শুরু থেকেই জঙ্গিবাদ দমনে কঠোর ছিল। পুলিশে গঠন করা হয় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট সিটিটিসি। ডিজিএফআই গঠন করে এলিট কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট সিটিআইবি। কড়া নজরদারি রাখা হয় সম্ভাব্য জঙ্গিদের কার্যকলাপের ওপর। তাই বর্তমানে প্রায় ঝিমিয়ে পড়েছে জঙ্গিবাদ। তবুও আমাদের সচেতন থাকতে হবে। কারণ এই জঙ্গিবাদ ধ্বংস করে দিয়েছে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, সিরিয়া, ইরাক বা ইয়েমেনের মত দেশ। আমরা কখনোই চাই না বাংলাদেশের বুকে আবার শুনতে সেই শ্লোগান-


‘আমরা হব তালিবান

বাংলা হবে আফগানিস্তান।’


Feature Image Source: banglatribune.com

Reference:

১। https://www.dhakatribune.com/world/south-asia/2019/12/23/40-years-on-veterans-still-grapple-with-soviet-afghan-war

২। https://www.thedefensepost.com/2018/08/30/video-bangladesh-al-qaeda-afghanistan-an-nasr/

৩। https://www.crisisgroup.org/asia/south-asia/bangladesh/threat-jamaat-ul-mujahideen-bangladesh

৪। http://edition.cnn.com/2004/WORLD/asiapcf/05/21/bangladesh.blast/

৫। http://archive.thedailystar.net/2004/05/22/d4052201011.htm

৬। http://news.bbc.co.uk/2/hi/south_asia/3586384.stm

৭।  https://www.theage.com.au/world/bangladesh-awakes-in-shock-as-blast-toll-hits-18-20040823-gdyi3x.html

৮। https://ctc.usma.edu/the-funding-methods-of-bangladeshi-terrorist-groups/

৯। https://www.bbc.com/news/world-asia-36687616

১০। https://indianexpress.com/article/world/world-news/dhaka-cafe-attack-masterminds-deputy-shot-dead-in-bangladesh-3011698/