লোকে বলে প্রথম প্রেম কখনো ভোলা যায়না। ঠিক তেমনি দেশের ক্রিকেট অঙ্গনেও এমন একজন আছেন যাকে ক্রিকেটপ্রেমী দর্শকরা হয়তো কখনো ভুলতে পারবে না। বিশেষ করে ২০০০ সাল থেকেই যারা বাংলাদেশ ক্রিকেট অনুসরন করেন, তাদের কাছে একসময় চোখের মণি ছিলেন তিনি। যার ব্যাটিং শৈলী মুগ্ধ করেছে দেশ বিদেশের বহু ক্রিকেট ভক্তকে, যার আক্রমনাত্মক ব্যাটিং দেখে বাংলাদেশ দল নিজেদের তুলনায় অনেক শক্তিশালী দলের বিপক্ষেও জয়ের স্বপ্ন দেখত, যিনি বাংলাদেশ ক্রিকেটকে বিশ্ব দরবারে নতুন রুপে পরিচয় করিয়েছেন, তিনিই হলেন বাংলাদেশের কোটি ক্রিকেট ভক্তের ‘আশার ফুল’ মোহাম্মদ আশরাফুল।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রথম সুপারস্টার মোহাম্মদ আশরাফুল। তার হাত ধরেই বেশকিছু অবিস্মরণীয় জয়ের স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। যে জয়গুলো পাল্টে দিয়েছে দেশের ক্রিকেটের গতিপথ। তিনিই আমাদের শিখিয়েছেন বিশ্ব ক্রিকেটের বাঘা বাঘা দলগুলোকে চোখ রাঙাতে। মোহাম্মদ আশরাফুলের ওয়ানডে অভিষেক হয় ২০০১ সালের ১১ই এপ্রিল এবং টেস্ট অভিষেক হয় একই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর। ওয়ানডে অভিষেকে তেমন সুবিধা না করতে পারলেও টেস্ট অভিষেকে সেঞ্চুরি হাকিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরিয়নের রেকর্ডটি নিজের নামে করে নেন। কিন্তু, ধারবাহিকতার অভাবে তিনি তখনো দলে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করতে পারেননি।
১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানোর পর দীর্ঘ দিন ধরে কোন ওয়ানডে জিততে পারেনি বাংলাদেশ। ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর থেকে টানা ২১ টি টেস্ট এবং ২৩টি ওয়ানডে হারের এক লজ্জার রেকর্ড করে বাংলাদেশ। এদিকে ২০০৩ বিশ্বকাপে ১৪.২০ গড়ে মাত্র ৭১ রান করলে দল থেকে বাদ পড়েন মোহাম্মদ আশরাফুল।
ঘরোয়া লিগে দুর্দান্ত ফর্মের কারণে ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারী এবং মার্চ এর মাঝামাঝি সময়ের জিম্বাবুয়ে সফরের ওয়ানডে দলে ডাক পান আশরাফুল। সফরে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ মিলে মাত্র একটি ওয়ানডে ম্যাচে জয় পেলেও ম্যাচটি জয়ের মাধ্যমে হারের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসে বাংলাদেশ। ম্যাচে ৩২ বলে ৫১ রান করে ম্যাচ সেরা হন মোহাম্মদ আশরাফুল।
একই বছর ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট দলে পুনরায় ডাক পান তিনি। সিরিজে এক ইনিংসে ব্যাক্তিগত ১৫৮ রান করে অপরাজিত থাকেন যা ঐসময়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একজন বাংলাদেশি হিসেবে কোন ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ব্যাক্তিগত সংগ্রহ এবং ম্যাচ শেষে প্রেস কনফারেন্সে ওই ইনিংসটিকে তৎকালীন ভারতীয় ক্যাপ্টেন সৌরভ গাঙ্গুলি তার নিজের দেখা টেস্ট ইনিংসগুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা বলে উল্লেখ করেন।
মোহাম্মদ আশরাফুল এক সময় শুধু একজন ক্রিকেটারই ছিলেন না, তিনি ছিলেন দেশের হাজারো ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য একটি আবেগ এবং অনুপ্রেরণার নাম। তার হাত ধরেই বাংলাদেশ পেয়েছে কিছু ঐতিহাসিক জয় যা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে বিশ্ব ক্রিকেট দরবারে নতুন রূপে চিনিয়েছে।
১.
২০০৫ সালে ইংল্যান্ড এর মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলার আমন্ত্রণ পায় বাংলাদেশ। সিরিজের অপর দুই দলগুলোর মধ্যে একটি হলো ক্রিকেট পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়া এবং আরেকটি স্বাগতিক ইংল্যান্ড।
২০০৫ সালের ৮ই জুন, কার্ডিফের সফিয়া গার্ডেনসে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। সবাই ভেবেছিলো হেসেখেলেই হয়তো জিতে যাবে অস্ট্রেলিয়া এবং আরেকটি নির্মম পরাজয়ের মুখ দেখবে বাংলাদেশ। কিন্তু, বিধি বাম। সেই ম্যাচে ৫ উইকেটে জয় পায় বাংলাদেশ যা এখনো ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অঘটন হিসেবে মনে করা হয়।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৫ উইকেটে ২৪৯ রান সংগ্রহ করে অস্ট্রেলিয়া। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দলীয় ৭২ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। কিন্তু মোহাম্মদ আশরাফুলের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ধীরে ধীরে জয়ের দিকে এগোতে থাকে বাংলাদেশ। ২১টি চারের মারে মাত্র ১০১ বলে ১০০ রান করে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হন তিনি। বহু দিন চলে গেলেও ম্যাকগ্রা এবং গিলেস্পি সমেত অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বসেরা বোলিং লাইনাপের বিরুদ্ধে আশরাফুলের সেই রুদ্ররুপী ইনিংসটির স্মৃতি আজও ভক্তকুলের মনে দোলা দিয়ে যায়। সেই ম্যাচটির পরেই মূলত বাংলাদেশ ক্রিকেটের গতিপথ বদলাতে থাকে।
২.
২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে আরেক শক্তিশালী দল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের প্রথম ওয়ানডে জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ২১২ রানে অল আউট হয় সফরকারি শ্রীলঙ্কা। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৩ ওভার বাকি থাকতেই ৪ উইকেটে জয় লাভ করে বাংলাদেশ। এই ম্যাচটিতে ৭১ বলে দলীয় সর্বোচ্চ ৫১ রান করেন আশরাফুল। ম্যাচ সেরার পুরস্কার না পেলেও তার ইনিংসটি সেবার ম্যাচ জয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল।
৩.
২০০৭ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে সুপার এইটে ওঠে বাংলাদেশ। সুপার এইটে অন্য কোন দলের বিপক্ষে জয় না পেলেও শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম আন্তর্জাতিক জয় তুলে নিয়ে নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দেয় বাংলাদেশ এবং সেই ম্যাচেও জয়ের প্রধান কারিগর ছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল।
গায়নার প্রভিন্সে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় দক্ষিণ আফ্রিকা। শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। দলীয় ৮৩ রানের মাথায় ৪টি উইকেট হারায়। এরপরেই ক্রিজে আসেন ত্রাণকর্তা আশরাফুল। আফতাব আহমেদকে নিয়ে ৭৬ রানের এবং মাশরাফিকে নিয়ে ৫৪ রানের পার্টনারশিপ করে ৪৯তম ওভারের প্রথম বলে ব্যাক্তিগত ৮৭ রান করে এন্ড্রি নেল এর বলে আউট হয়ে সাজঘরে ফিরেন তিনি। ততক্ষণে ম্যাচ জয়ের রসদ পেয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। পরবর্তীতে ম্যাচটি ৬৭ রানে জিতে নেয় বাংলাদেশ এবং ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন মোহাম্মদ আশরাফুল।
২০০৭ সালে ঘরের মাটিতে ভারত সিরিজের পর ওয়ানডে থেকে অবসরের ঘোষণা দেন তৎকালীন অধিনায়ক হাবিবুল বাশার এবং বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হন মোহাম্মদ আশরাফুল।
৪.
২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় বসে টি২০ বিশ্বকাপের সর্বপ্রথম আসর। ওই বিশ্বকাপেও ওয়েস্ট-ইন্ডিজকে হারিয়ে সুপার এইটে উঠে পুনরায় চমক দেখায় বাংলাদেশ। এই ম্যাচেও জয়ের নায়ক ছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুলই। ২০০৭ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বরের সেই জয় ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য আরেকটি ঐতিহাসিক জয়।
ঐদিন প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ১৬৪ রানে থামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এর ইনিংস। জবাবে ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনার নাজিমুদ্দিন ও তামিম ইকবালকে দলীয় ২৮ রানে হারায় বাংলাদেশ। কিন্তু এরপর মোহাম্মদ আশরাফুল ও আফতাব আহমেদের আক্রমনাত্মক ব্যাটিং এর কল্যাণে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি বাংলাদেশকে। শুরু থেকেই একের পর এক চার ছক্কায় দিশেহারা হয়ে পড়ে ওয়েস্ট-ইন্ডিজ এবং মাত্র ২০ বলেই নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক টি২০ অর্ধশতক তুলে নেন আশরাফুল, যা তখন টি২০ ক্রিকেটে দ্রুততম অর্ধশতক ছিল। মাত্র ২৭ বলে ব্যাক্তিগত ৬১ রান করে সারওয়ানের বলে সাজঘরে ফেরার সময় ম্যাচে চালকের আসনে বাংলাদেশ এবং পুনরায় ম্যাচ সেরার পুরস্কার ওঠে অধিনায়ক আশরাফুলের হাতে।
৫.
২০০৮ সালের অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ সফরে আসে নিউজিল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট দল এবং সেই সফরেই ওয়ানডে সিরিজে নিউজল্যান্ডের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের প্রথম ওডিআই ম্যাচ জেতে বাংলাদেশ।
২০০৮ সালের ৯ই অক্টোবর মিরপুরের শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের দেয়া ২০২ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে ৭ উইকেটে জয় পায় বাংলাদেশ। দলীয় ৮৫ রানের মাথায় ২য় উইকেটের পতন ঘটলে জুনায়েদ সিদ্দিকের সাথে ১০৯ রানের ম্যাচ জয়ী জুটি করেন। ব্যাক্তিগত ৮৫ রানে জুনায়েদ সিদ্দিক প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলেও মোহাম্মদ আশরাফুল শেষ পর্যন্ত ৫৬ বলে ৬০ রান করে অপরাজিত থাকেন যার মধ্যে ছিল ৫টি চার এবং একটি ছক্কার মার। ম্যাচ সেরার পুরস্কারটি না পেলেও ম্যাচ জয়ে মোহাম্মদ আশরাফুলের অবদান কোন অংশে কম ছিল না।
২০০৯ টি২০ বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয় বাংলাদেশকে এবং এর ফলে অধিনায়কত্ব হারান তিনি। ২০১০ সালের ইংল্যান্ড সফরে বাজে ফর্মের কারণে কারণে দল থেকে বাদ পড়েন এবং এরপর থেকে দলে শুধু আসা যাওয়ার মধ্যেই ছিলেন। ২০১০ সালে চীনে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে আশরাফুলকে অধিনায়ক করা হয় এবং ওই আসরে স্বর্ণপদক জেতে বাংলাদেশ।
২০১১ বিশ্বকাপে দলে ডাক পেলেও ব্যাট হাতে ছিলেন মলিন যার ফলে দলে নিজের পাকা জায়গা হারান তিনি এবং এরপরে কিছু ম্যাচে সুযোগ পেলেও নিজেকে ঠিক নতুন করে আবারও প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন তিনি। ২০১২ সালে বিপিএলে ভালো ফর্মের কারণে সেই বছর শ্রীলঙ্কা বিশ্বকাপে দলে ডাক পান তিনি। কিন্তু ২ ম্যাচে মাত্র ৩৫ রান করে পুনরায় দল থেকে বাদ পড়েন।
২০১৩ সালের শ্রীলঙ্কা সফরে যাওয়ার পূর্বে শাহরিয়ার নাফিস ইনজুরিতে পড়লে জাতীয় দলে ডাক পড়ে আশরাফুলের। সেই সফরের প্রথম টেস্টে ১৯০ রানের এক ঝলমলে ইনিংস খেলে পুনরায় আলোচনায় আসেন তিনি। এরপর জিম্বাবুয়ে সফরেও তাকে দলে রাখা হয়।
ক্রিকেট থেকে নির্বাসন
২০১৩ সালের বিপিএলে চিটাগং কিংস এবং বরিশাল বার্নারসের বিপক্ষে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ প্রমাণিত হলে সবধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হন আশরাফুল। মূলত, ২০১২ সালেই শ্রীলংকার ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট এসএলপিএলে (SSPAL) রুহুনা রয়্যালসের হয়ে খেলার সময় ফিক্সিং দুনিয়ার সাথে প্রথম পরিচিত হন মোহাম্মদ আশরাফুল। তবে এর আগে বেশকিছু আন্তর্জাতিক ম্যাচেও তিনি ম্যাচ পাতিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ।
২০১৫ সালের ১লা জানুয়ারি শ্রীলঙ্কার অন্যতম দৈনিক ডেইলি মিররে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইসিসির দুর্নীতি দমন কমিশন আক্সুর কাছে ২০১২ সালের ২৬ আগস্ট রুহুনা রয়্যালস বানাম ওয়াইয়াম্বা ইউনাইটেডের ম্যাচটি পাতানোর সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন বলে স্বীকার করেন। ২০১৩ সালে বিপিএলে ম্যাচ পাতানোর দায়ে পরের বছর তথা ২০১৪ সালে বিপিএল এন্টি করাপশন ট্রাইব্যুনাল আশরাফুলকে ৮ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করলেও সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ডিসিপ্লিনারি প্যানেল ওই সাজা কমিয়ে পাঁচ বছর করে। আশরাফুলের এই সাজা ভক্তদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো।
সম্প্রতি, এক ফেইসবুক লাইভ আড্ডায় ক্রিকেট থেকে নিষেধাজ্ঞাকালীন সময় নিজের আত্মহত্যা করার চিন্তার কথা জানান তিনি। তিনি বলেন,
‘’এমনও আমার মাথার মধ্যে এসেছিল যে আমি বেঁচে থাকবো নাকি সুইসাইড করবো। এই ধরনের চিন্তাও আমার মধ্যে এসেছে। সময় যাচ্ছে। সময়ই তোমাকে সব চেঞ্জ করে দেবে। আমি কীভাবে মানুষের কাছে মুখ দেখাব, পরিবার কীভাবে থাকবে। আমি এটা নিয়ে খুব আপসেট ছিলাম।’”
২০১৫ সালের ১১ ডিসেম্বর অনিকা তাসলিম অর্চির সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন আশরাফুল। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম সন্তানের বাবা হন তিনি। তবে সম্প্রতি দ্বিতীয় সন্তানের বাবা হয়েছেন তিনি।
২০১৬ সালে শুধুমাত্র ঘরোয়া ক্রিকেটের দরজা খোলে আশরাফুলের জন্য এবং জাতীয় ক্রিকেট লিগে ঢাকা মহানগরের হয়ে ৫ ম্যাচে ২০.৫০ গড়ে মাত্র ১২৩ রান করেন। যার ফলে নির্বাচকেরা তাকে সেই বছর ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক টেস্ট টুর্নামেন্ট বিসিএলেও বিবেচনা করেননি। তবে ২০১৮ সালের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের হয়ে ৫টি সেঞ্চুরির বদৌলতে রানের ফোয়ারা ছুটিয়েছিলেন আশরাফুল। যার কারণে পরের বছর ২০১৯ বিপিএলে চিটাগং ভাইকিংসের হয়ে খেলার সুযোগ পান। তবে ৩ ম্যাচে মাত্র ২৫ রান করলে আর সুযোগ পাননি তিনি। ২০২০ সালে করোনা বিরতির পূর্বে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের হয়ে খেলছিলেন তিনি।
মোহাম্মদ আশরাফুল আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটে ৬১ ম্যাচে ৬টি শতক ও ৮টি অর্ধশতকসহ ২৪ গড়ে ২৭৩৭ রান করেছেন এবং ওডিআই ক্রিকেটে ৩টি শতক ও ২০টি অর্ধশতকের বিনিময়ে ২২.০৯ গড়ে ৩৪৬৮ রান করেন। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ২৩ ম্যাচে করেন মাত্র ৪৫০ রান। মূলত তিনি কী মানের ব্যাটসম্যান ছিলেন তা তার পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিবেচনা করলে ভুল হবে!
মোহাম্মদ আশরাফুল, এটি শুধু একটি নাম নয়, এটি যেন লাখো ভক্তের এক বেদনাময় দীর্ঘশ্বাস। ২০০৮ সালে আইসিএলে খেলার জন্য মোহাম্মদ আশরাফুলকে ৪ কোটি টাকার অফার করা হলেও তিনি নিজ দেশের টানে সেই অফার প্রত্যাখ্যান করেন। যেখানে আইসিএলের ৪ কোটি টাকা ফিরিয়ে দিলেন, সেখানে সামান্য কয়েক লাখ টাকার জন্য কেন ফিক্সিং করলেন আশরাফুল? মোহাম্মদ আশরাফুল নামটি বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের হৃদয়ে এনে দেয় পুরনো দিনের সেই রোমাঞ্চকর অনুভূতি। ফিক্সিংয়ে জড়ানোর ভুলটি না করে থাকলে হয়তো তার ক্রিকেট জীবনের শেষ অংশটিও রঙিন হতে পারতো। হয়তো ভুলটি না করলে তিনিও সাকিব, তামিম, মুশফিক, রিয়াদ, মাশরাফিদের মতো জীবন্ত কিংবদন্তীর সাথে একই কাতারে থাকতেন। আশরাফুল ফের জাতীয় দলে ফিরতে পারবেন কিনা তা সময়ই বলে দিবে। কিন্তু কথায় আছে আশায় বাঁচে চাষা। আশরাফুল আবারো ফিরবেন আগের থেকেও শক্তিশালী হয়ে, আবারো লাল সবুজের জার্সি গায়ে মাঠ মাতাবেন, তার অসংখ্য ভক্তদের এটাই কামনা।
Feature Image Source: natunbarta.com