পৃথিবীর বিখ্যাত ব্যান্ডগুলোর আদি নাম

আচ্ছা কেমন হতো যদি রেডিওহেড না ডেকে আমরা বিখ্যাত এই ব্যান্ডটিকে ডাকতাম ‘অন আ ফ্রাইডে’ বলে? কিংবা অজি অসবোর্ন দুনিয়ে চষে কনসার্ট করতো কিন্তু ব্যানারে নাম থাকতো তাঁর মায়ের ব্যবহার করা প্রিয় এক ট্যালকম পাউডারের নাম? শুনতে কিছুটা উদ্ভট ও হাস্যকর হলেও এই বিখ্যাত ব্যান্ডগুলোর আদি নাম গুলো ছিলো এইরকমই। বর্তমান থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। শুধু এই দুই গানের দলই নয় পৃথিবী জুড়ে অনেক গানের দলই নিজেদের নাম পরিবর্তন করেছে। কেনই বা এই নাম পরিবর্তন বা কারা কারা এই নাম পরিবর্তনের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত? আজ আমরা দেখবো সেই ইতিহাস এবং সাথে সাথে দেখবো সেইসব ব্যান্ডগুলোও যারা নিজেদের নাম পরবর্তন করে ফেলেছিলো।

এসি/ডিসি – থার্ড ওয়ার্ল্ড ওয়্যার

বিখ্যাত এই অস্ট্রেলিয়ান ব্যান্ডের গোড়াপত্তন দুই ভাই ম্যালকম ও এনগাস ইয়াং এর হাত ধরে। হার্ড রক ঘরানার গান এর প্রতি ঝোঁক ছিলো দুই ভাইয়েরই। নিজেদেরকেও রক ব্যান্ড হিসেবে প্রস্তুত করার প্রাক্কালে ব্যান্ডের নাম দেন থার্ড ওয়ার্ল্ড ওয়্যার। কিন্তু তাদের বর্তমান নামের উৎস কি? দুই ভাইয়ের অবশ্য দুই ধরনের গল্প। তাদের মতে এসি/ডিসি এসেছে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার অথবা সেলাই মেশিন থেকে।

এসি/ডিসি ব্যান্ডের সদস্যবৃন্দ; Image Courtesy: media.timeout.com
এসি/ডিসি ব্যান্ডের সদস্যবৃন্দ; Image Courtesy: media.timeout.com

এনগাসের দাবি সে তাঁর বোন মার্গারেটের সেলাই মেশিনে প্রথম এসি/ডিসি নামটি অবলোকন করে। কিন্তু আরেক ভাই ম্যালকমের দাবি এই নামটি তারা সর্বপ্রথম দেখে একটি ভ্যাকুয়াম ক্লিনারে। যে ই সঠিক হোক তাতে এই ব্যান্ডের ভক্তদের কি ই বা আসে যায়। বিজ্ঞানের ভাষায় বলতে গেলে এসি ডিসি মানে অল্টারনেটিং ও ডিরেক্ট কারেন্ট। যার মানে দাঁড়ায় এই অস্ট্রেলিয়ান ব্যান্ড দুই উপায়েই আপনাকে চাঙ্গা করে তুলতে পারবে। বেশিরভাগ সঙ্গীত শ্রোতারাই নির্দিধায় একমত হবেন তাতে। 

ইউ টু – দ্য হাইপ

গান ভালবাসেন কিন্তু ইউ টু কে চেনেন না এমন মানুষ কমই রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ২১ টি গ্র্যামি জেতা আইরিশ ব্যান্ড ইউ টু শুরুর দিকের নাম ছিলো দ্য হাইপ। এমনকি ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত এই নামেই গান গেয়ে এসেছিলেন এই ব্যান্ড।

ইউ টু ব্যান্ডের সদস্যবৃন্দ; Image Courtesy: chicagotribune.com
ইউ টু ব্যান্ডের সদস্যবৃন্দ; Image Courtesy: chicagotribune.com

পরবর্তীতে নিজেদের গুরু হিসেবে মানা আইরিশ কিংবদন্তী গায়ক স্টিভ এভরিল তাদের পরামর্শ দেন দলের নাম পরিবর্তন করে ইউ টু রাখতে। কারণ স্টিভের কাছে মনে হয়েছিলো দ্য হাইপ নামটি একটু ছেলেমানুষী টাইপ নাম। আর অন্যদিকে ইউ টু ছিলো একটি স্পাই প্লেন ও সাবমেরিনের নাম। তার মতে এই নামের মধ্যে সামগ্রিকভাবে একটি গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে। তাই স্টিভ এভরিলের কথামতো সদস্যরা নিজ ব্যান্ডের নতুন নামকরণ করেন ইউ টু। 


ক্রিড – নেকেড টডলার

নিজেদের তৈরী আলাদা ঘরানার গ্রাঞ্জ মেটাল গানের জন্য তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করা ব্যান্ড ক্রিডের আদি নাম ছিলো নেকেড টডলার। দলের মূল গায়ক স্কট স্ট্র্যাপের মতে এই নামটি অনেকেই ভালো চোখে নেয়নি।

ক্রিড ব্যান্ডের সদস্যবৃন্দ; Image Courtesy: radiomaxmusic2.wordpress.com
ক্রিড ব্যান্ডের সদস্যবৃন্দ; Image Courtesy: radiomaxmusic2.wordpress.com

বিশেষ করে মেয়েরা ভালো চোখে নেয়নি। কারণ তাদের দাবি ছিলো এই নামটি তাদের মাথায় পেডোফিলিয়ার ভাবনা এনে দেয়। তাই তাদের দাবি মেনে নিয়ে ব্যান্ডটি নিজেদের নাম পরিবর্তন করে৷ ক্রিড নামের হেতু নিয়ে স্কট স্ট্র্যাপ জানান যে ক্রিড মানে হচ্ছে কোনো কিছুতে বিশ্বাস করা। তারা চেয়েছেন তাদের ভক্তরা যাতে তাদের উপর ভালো ও খারাপ দুই সময়েই আস্থা রাখে। 


গ্রিন ডে – সুইট চিলড্রেন

১৯৮৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় গড়ে উঠা পাংক রক ব্যান্ড গ্রিন ডে বর্তমানেও তুমুল জনপ্রিয় এক ব্যান্ড। কিন্তু শুরুর দিকে গ্রিন ডে এর বদলে এই গানের দলের নাম ছিলো সুইট চিলড্রেন। কিন্তু নিজেদের প্রথম এলবাম প্রকাশিত করার আগেই দলের নাম পাল্টে নেয় তারা। কারণ তাদের মনে হয়েছিলো সুইট চিলড্রেন নামের ভেতর শিশুসুলভ একটা ভাব রয়েছে। আর হয়তো নামের জন্যই অনেকেই তাদের হালকা ভাবে নিবে।

গ্রিন ডে ব্যান্ডের সদস্যবৃন্দ; Image Courtesy: amazonaws.com
গ্রিন ডে ব্যান্ডের সদস্যবৃন্দ; Image Courtesy: amazonaws.com

আরেকটি হেতু ছিলো একটি স্থানীয় ‘সুইট বেবি’ নামের এক ব্যান্ডের নামের সাথে যাতে গোলমাল না লাগে। পরবর্তীতে নামকে আরো পুরুষালী করতে গ্রিন ডে নামকরণ করা হয়৷ পুরুষালী কীভাবে হলো? কারণ গ্রিন ডে বলতে সারা দিন রাত ভর মারিজুয়ানা পান করা বুঝানো হয়েছিলো।

লিংকিন পার্ক – জিরো

ইন দ্য এন্ড বা নাম্ব দিয়ে সাড়া ফেলে দেওয়া অল্টারনেটিভ রক ব্যান্ড লিংকিন পার্কের আদি নাম ছিলো জিরো। নিজেদের প্রথম এলবাম বের করার প্রাক্কালে সেটি পরিবর্তন করে হাইব্রিড থিওরি রাখলেও চেস্টার বেনিংটনের কাছে নামটি বেশ কাঠখোট্টা মনে হয়।

লিংকিন পার্ক ব্যান্ডের সদস্যবৃন্দ; Image Courtesy: amazonaws.com
লিংকিন পার্ক ব্যান্ডের সদস্যবৃন্দ; Image Courtesy: amazonaws.com

পরবর্তীতে মাইক শিনোদা আর বেনিংটন মিলে সান্তা মনিকার লিংকন পার্কের নামানুসারে নাম রাখতে গিয়েও বিধিবাম। কারন এই নামে তৎকালীন সময়ে কোনো ডোমেইন ই অবশিষ্ট ছিলোনা ইন্টারনেটে। তাই বাধ্য হয়েই পার্কের নাম হালকা এদিক সেদিক করেই আজকের লিংকিন পার্ক।

কুইন – স্মাইল

কুইনের আগমন ৬০ দশকের শুরুর সময়ে। ব্যান্ড দলে তখনো ফ্রেডি মার্কারির আগমন হয়নি। স্মাইল নামে বিভিন্ন কনসার্টে গান গেয়ে বেড়াচ্ছিলো দলটি। ফ্রেডি মার্কারি ছিলেন স্মাইল ব্যান্ডের মুগ্ধ এক শ্রোতা। কিন্তু কিছুদিন পর দলের মূল গায়ক স্ট্যাফেল হাম্পি বং নামের অন্য এক গানের দলে যোগ দেওয়ার জন্য চলে গেলে ভাগ্যক্রমে তার ফেলে যাওয়া জায়গায় যোগ দেন ফ্রেডি মার্কারি। আর ফ্রেডির পরামর্শেই ১৯৭৩ সালে নিজেদের প্রথম এলবাম প্রকাশের আগে একটু চিত্তাকর্ষক নাম কুইন কে বেছে নেয় দলটি। সেই থেকে স্মাইল থেকে কুইনে রুপ নেয় দলটি।

কুইন ব্যান্ডের সদস্যবৃন্দ; Image Courtesy: britannica.com
কুইন ব্যান্ডের সদস্যবৃন্দ; Image Courtesy: britannica.com

রেডিওহেড – অন আ ফ্রাইডে

অন আ ফ্রাইডে নামকরণের প্রেক্ষাপট একেবারেই সাদামাটা। ৮০ এর দশকে কয়েকজন কলেজ বন্ধু মিলে প্রতি শুক্রবার স্কুলের মিউজিক রুমে নিয়ম করে গান রিহার্সেল করতো। কিন্তু ব্যান্ড গড়ে তোলা কিংবা এই ধরনের চিন্তা ভাবনা তখনো আসেনি তাদের মাঝে। নিছক মজার ছলেই ব্যান্ডের নাম দেয় অন আ ফ্রাইডে।

রেডিওহেড ব্যান্ডের সদস্যবৃন্দ; Image Courtesy: andwhatsnext.com
রেডিওহেড ব্যান্ডের সদস্যবৃন্দ; Image Courtesy: andwhatsnext.com

কিন্তু কয়েক বছর না ঘুরতেই অনেক সদস্যের পরিবর্তনে ধীরে ধীরে সত্যিকার অর্থেই একটি ব্যান্ড গড়ে তুলতে আগ্রহী হয় তারা। তখনই নাম পরিবর্তন করে অন আ ফ্রাইডের বদলে ব্যান্ডের নাম রাখা হয় রেডিওহেড। বিখ্যাত গান টকিং হেডকে শ্রদ্ধা জানিয়েই এই নামকরণ।

ব্ল্যাক সাবাথ – দ্য পলকা টাল্ক ব্লুজ ব্যান্ড

শুরুর দিকের এই বিদঘুটে নামের উৎস বেশ হাস্যকর। ব্ল্যাক সাবাথের মূল গায়ক অজি অসবোর্ন এই নামটি নিয়েছিলেন তাঁর মায়ের প্রিয় এক ট্যালকম পাউডার থেকে। পরবর্তীতে নিজেরাই নাম পরিবর্তন করার উদ্যোগ নিলে জুতসই কোনো নামও খুঁজে পাচ্ছিলেন না। কিন্তু ব্যান্ড দলের সব সদস্যদের মধ্যে একটি ব্যাপারে একশভাগ মিল ছিলো। তা হচ্ছে সবাই ভৌতিক মুভি বেশ পছন্দ করতো।

ব্ল্যাক সাবাথ ব্যান্ডের সদস্যবৃন্দ; Image Courtesy: orangeamps.com
ব্ল্যাক সাবাথ ব্যান্ডের সদস্যবৃন্দ; Image Courtesy: orangeamps.com

সেই বছরেই ১৯৬৩ সালে মারিও বাভার তিন পর্বের ভৌতিক উপন্যাস থেকে একটি মুভি নির্মান করা হয়। মুভির নাম কি ছিলো তা নিশ্চয়ই পাঠক এতক্ষনে ধরে ফেলতে পেরেছেন। হ্যা, মুভিটির নামও ছিলো ব্ল্যাক সাবাথ। নিজেদের একইরক্ম পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে ব্যান্ডের নাম হয়ে যায় ব্ল্যাক সাবাথ।

Feature Image Courtesy: pinterest.com