লালন সাঈ তৎকালীন সমাজের প্রচলিত এবং প্রলংকারী জাত প্রথাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে গিয়ে নিজেদের দাবি করেছেন পাগল হিসেবে। তিনি লিখেছেন-
“তিন পাগলে হইলো মেলা নইদে এসে,
তোরা কেউ যাসনে ও পাগলের কাছে।”
তাঁর অন্য একটি গানে তিনি লিখেছেন- “কত করে ডাকলাম তারে তবু দেখা পাইলাম না। পাগল ছাড়া দুনিয়া চলেনা।” এমনই আরেকটি লোকসঙ্গীতে দেখা যায় এই পাগল শব্দটির বিশেষ ব্যবহার। মনমোহনের গান বা মলয়ার গানে আছে- ‘যে তোরে পাগল বলে তারে তুই বলিস নে কিছু।’ প্রচলিত অর্থে পাগল হলো মানসিক বিকারগ্রস্থ মানুষেরা। অন্যভাবে বলা যায়, সমাজ স্বাভাবিক মানুষের যে সংজ্ঞায়ন সৃষ্টি করেছে, সেই সংজ্ঞায়নের বলয়ের বাইরে যারা বিচরণ করে তারাই পাগল। লালন এবং মনমোহনের এই লোকসঙ্গীতগুলোতে পাগল শব্দটিকে ব্যবহার করা হয়েছে একটু অন্য দিক থেকে। একটু লক্ষ করলেই দেখা যাবে যে, এই পাগলেরা হলো প্রথাবিরোধী। যারা সমাজের প্রচলিত রীতিনীতি, বিশ্বাস এবং চর্চাগুলোকে প্রশ্ন করে এবং কখনো যুক্তিবাদ, কখনো মানবিকবোধকে পুজিঁ করে অন্যায়, অনাচার এবং ক্ষতিকর নিষ্ঠুর সংস্কারগুলোর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় তারাই এই লোকসঙ্গীতের ভাষ্য মতে পাগল। এই পাগলরাই প্রথাবিরোধী। তারা পাগল এই কারণে যে যারা সমাজের গড়ে দেয়া ছাচেঁ নিজেকে আবদ্ধ করেনি।

লোকসঙ্গীতের এই গভীর ভাব আমাদের স্পর্শ করে। আমাদের ভাবতে শেখায়। আমাদের মাথায় উদ্রেক করে নতুন নতুন প্রশ্ন। কেননা, এই সঙ্গীতগুলো প্রথাবিরোধী সঙ্গীত। সমাজের প্রচলিত ছাঁচের তালে এরা চলতে রাজি নয়। বরং, এরা মোহনীয় ভঙ্গীতে প্রশ্ন করতে আগ্রহী। সমাজের সাধারণের সাথে নিঃশর্ত ঐকমত্য এরা মেনে নেয় না। তাই এরা পাগল, এরা প্রথাবিরোধী। লোকসঙ্গীতের এই পাগলদের কথা ভেবে একটি প্রশ্নের অবতারণা হয়। পাগলরা প্রথাবিরোধী? নাকি যারা প্রথাবিরোধী, নব্য নব্য চিন্তা করে সমাজ ও রাজনীতির গড়ে দেয়া ছাঁচ মেনে চলতে অস্বীকার জানায় তাদের আমরা পাগল, উদ্মাদ, সমাজ বিরোধী, সমাজের শান্তিবিনষ্টকারী বা দুষ্কৃতি বলে আখ্যায়িত করি?
এই পাগলেরা সমাজের প্রথাকে প্রশ্ন করে। সমাজের প্রচলিত সংস্কারকে যুক্তি এবং কখনো মানবীয় আবেগ দিয়ে বিবেচনা করে। প্রচলিত এবং আধিপত্যশীল বলেই তারা কোন ধারণাকে এক বাক্যে গ্রহণ করেনা, অপ্রচলিত এবং অজনপ্রিয় বলেই তারা কোন ধারণাকে বাতিল করে দেয়না। তারা শাস্ত্রকরদের নীতিকে নিঃশর্তে মেনে নেয়না। সমাজের রীতিনীতির তারা অন্ধ অনুসারী নয়, বরং নব্য চিন্তার ধারক ও বাহক। যুগে যুগে এই পাগলদের হাত ধরেই এসেছে নব্য চিন্তা, নব্য নব্য ধারণা। যা অনেকাংশেই পাল্টে দিয়েছে সমাজকে। বাতিল করেছে বিভিন্ন অকার্যকর, অপ্রয়োজনীয় ও নিষ্ঠুর নীতি ও সংস্কার।

এই পাগলদের যেমন ভয় পায় নীতিবাগীশেরা, নীতি-নির্ধারকেরা, তেমনি এই পাগলদের এড়িয়ে চলে তথাকথিত সমাজের স্বাভাবিক সভ্যরা। কেননা, সাধারণেরা ভালোবাসে আধিপত্যশীল দলে ভারী মতকে অর্থাৎ কনফরমিটিকে। জনপ্রিয় মতকে তারা চোখ বন্ধ করে অনুসরণ করে। কখনো যদি তাদের মনে ভুলেও দ্বিধার জন্ম হয়, সমাজের অন্যান্যরা সেই দ্বিধাকে গলা টিপে হত্যা করে। বলে- এতো প্রশ্ন করোনা। যা সবাই মানে তাই মেনে চলো। পাগলেরা বা প্রথাবিরোধীরা প্রশ্ন করে এই বিষয়গুলোকেই। তাই তাদের নিয়ে সমাজপতিদের এতো ভয়। সমাজপতিদের প্ররোচনায় পাগলদের দূরে সরিয়ে রাখে সমাজে আর দশটি লোক। এই প্রথাবিরোধীরা তাই খেতাব পায় অসামাজিক, পাগল, উদ্মাদ, অধার্মিক এবং সমাজের শান্তি বিনষ্টকারী হিসেবে।
অথচ যুগে যুগে সমাজ পরিবর্তনের মূল কারিগর এই পাগলেরাই। সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ভেবারের মতে প্রতিটি ব্যক্তিসত্ত্বাই সমাজের জটিল যন্ত্রের একেকটি যন্ত্রাংশ। এই যন্ত্রাংশগুলো একসাথে কাজ করে। এভাবে সমাজ এগিয়ে যায়। ম্যাক্স ভেবারের এই মত থেকে একটি বিশেষ বিষয় মাথায় আসে। সমাজ যে পরিবর্তনশীল তা প্রতিষ্ঠিত সত্য। একটি বিশেষ সমাজ যুগের সাথে সাথে বদলায়। তাহলে সমাজের জটিল ম্যাকানিজমের প্রতিটি কগ বা যন্ত্রাংশ যদি একই রূপে কাজ করে তবে সমাজে পরিবর্তনগুলো আসে কী করে? এখন ধরুন, সমাজের প্রতিটি যন্ত্রাংশের একটি দুটি যন্ত্রাংশ যদি পুরো যন্ত্রটি যে রীতিতে চলছে তাকে প্রশ্ন করে বসলো এবং অন্যান্য যন্ত্রগুলোর সাথে এক হয়ে চলতে রাজি হলোনা। তখন অন্যান্য যন্ত্রাংশগুলো প্রতিবাদ করবে। হয়তো সেই অন্য পথে চলা যন্ত্রাংশগুলোকে বা যন্ত্রাংশ গ্রহণ করবেনা। হয়তো যন্ত্রটি থেকে সেই যন্ত্রাংশকে ছুড়ে ফেলা হবে। কিন্তু, একই সাথে এই বিগড়ে যাওয়া যন্ত্রাংশটির যে নব্য ধারণা তা প্রচলিত আধিপত্যশীল ধারণাকে কিছুটা হলেও প্রশ্নবিদ্ধ করবে, আঘাত করবে। এতে রাতারাতি যন্ত্রের গতিপথ বদলে না গেলেও জন্ম নেবে চিন্তার একটি নতুন রাস্তা।

আধিপত্যশীল মতের সাথে প্রশ্নহীনভাবে তাল মিলিয়ে চলা মানুষেরা কখনোই সমাজে নতুন চিন্তার জন্ম দেননি। যারা দিয়েছেন তারা দাঁড়িয়েছেন বৃহৎশক্তির বিরুদ্ধে। কালক্রমে তাদের মতও আধিপত্যশীল হয়ে উঠতে পারে বটে। মধ্যযুগের আধিপত্যশীল মতাদর্শ খৃষ্টধর্মের প্রবক্তা যিশু কি প্রথাবিরোধী ছিলেননা? প্রথাবিরোধী হতে গিয়ে ক্রুশবিদ্ধ হন তিনি। একই ভাবে ইসলাম ধর্মের জন্মলগ্নেও ইসলাম জনপ্রিয় ধর্ম ছিলনা। আরবের কুরাইশ বংশে জন্ম নেয়া হজরত মুহম্মদ (সা.) যখন আরবের শ্রেণীবিভেদ, যুদ্ধ-বিগ্রহের বিরুদ্ধে ইসলাম প্রচার করেছিলেন, তিনিও কিন্তু দাড়িয়েঁছিলেন আধিপত্যশীল মতের বিরুদ্ধে। কালক্রমে এই পয়গম্বরদের মতাদর্শ হয়ে পড়ে আধিপত্যশীল। লক্ষণীয় ব্যপার, প্রথাবিরোধী নব্য চিন্তা থেকে জন্ম নেয়া মতও যখন আধিপত্যশীল হয়ে উঠে, তার বিরুদ্ধেও জন্ম নেয় প্রথাবিরোধী পাগলদের নব্য চিন্তা। ঠিক যেমন খৃষ্টধর্ম যখন আধিপত্যশীল হয়ে উঠেছিল তখন চার্চের যথেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন মার্টিন লুথার। ব্রুনো, কোপার্নিকাস, গ্যালিলিওরাও প্রথাগত জ্ঞানকে প্রশ্ন করেছিলেন যুক্তিবাদ ও বিজ্ঞান দিয়ে। কার্ল মাক্স, ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস, লেনিন, মাওরাও তো রাজনীতি করেছেন। কিন্তু সেগুলো প্রথাবিরোধী রাজনীতি। শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁরা। পৃথিবীর চিন্তাজগৎকে দিয়েছিলেন নব্য ধারণা।

সমাজের নব্য চিন্তার অনুপ্রবেশের জন্য এই পাগলদের ভীষণ প্রয়োজন। জন স্টুয়ার্ট মিল তাই জোড় দিয়ে প্রথাবিরোধীদের গ্রহণযোগ্যতার কথা বলেছেন। একটি সমাজে আধিপত্যশীল প্রচলিত সমাজের ধারণার বিরুদ্ধে যারা রুখে দাঁড়ায় তাদের প্রতি আর দশজনের একটি অগ্রহণযোগ্যতামূলক মনোভাব দেখা যায়। মিলের মতে এই বিষয়টি সমাজের জন্য নেতিবাচক। কেননা, তাতে সমাজের মানুষেরা ছাঁচবদ্ধ হয়ে যায় এবং সমাজ হয়ে পড়ে নিশ্চল। প্রথাবিরোধী এবং তাদের নব্য ধারণার প্রতি সাধারণ এবং ‘স্বাভাবিক’ মানুষের প্রধান অভিযোগ- এসকল নব্য ধারণা সমাজের মূল্যবোধকে ধ্বংশ করে দেয় এবং সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কাজেই এসকল ধারণা প্রবেশ করতে দেয়া উচিৎ নয়। এই অভিযোগ সব ক্ষেত্রে মিথ্যা নয়। কখনো কখনো নব্য ধারণাগুলো সমাজে অবক্ষয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে বটে। কিন্তু আবার ফিরে আসি মিলের বক্তব্যে। তিনি বলছেন, নব্য ধারণাকে যে স্থান পেতে হবেই এমন কথা নেই। বরং, নব্য ধারণাকে প্রবেশ করতে দিতে হবে। সমাজে একাধিক মতাদর্শ ও দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে আন্তক্রিয়া শ্রেষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গীটিই গ্রহণযোগ্যতা পাবে।

সমাজে প্রথাবিরোধী পাগলদের প্রবেশাধিকার না দেয়ার বিষয়টি খুব বেশি দেখা যায়। তার অবশ্য একাধিক কারণ বিদ্যমান। প্রথমত, নব্য চিন্তাকে মানুষ ভয় করে। আধিপত্যশীল চিন্তার সাথে ঐকমত্য প্রকাশ করা যেমন স্বস্তিদায়ক তেমন সহজ। কেননা, এতে বিরোধীতার শিকার হতে হয়না। উপরন্তু, সমাজের আর দশজনের সাথে ঠাই পাওয়া যায়। ক্ষেত্রবিশেষে প্রশংসা কুড়ানো যায়। তাই নব্য চিন্তাকে সাধারণেরা ভয় পায়। তাছাড়া আধিপত্যশীল ধারণাকে পুজিঁ করে চলে যে ক্ষমতাশীল গোষ্ঠী, তারা নব্য চিন্তাকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখে। কেননা, নব্য চিন্তা তাদের মুখোশ উন্মোচন করে দিতে পারে, তাদের কর্মকান্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। মোট কথা, যে আধিপত্যশীল মত বেঁচে তারা সুবিধাপ্রাপ্ত হতো, তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই সাধারণকে তারা সাধারণই থাকতে বলে। পাগল হয়ে উঠতে বাঁধা দেয়। শুধু নব্য চিন্ত নয়, শোষিত ও ক্ষমতাহীনদের পাশে দাঁড়ায় এই প্রথাবিরোধীরাই। কেননা ক্ষমতাহীন এবং শোষিতদের অবজ্ঞা করা, তাদের আরো বেশি শোষণ ও নিপীরণ করাই যুগযুগান্তরে সমাজের প্রচলিত রীতি। অভিজাত, ঔপনিবেশিক শাসক, স্বৈরাচার, ধনিক ও পুঁজিপতি শ্রেণীরাই সমাজের চিন্তাজগতের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখতে চায়। তারা প্রাণপণ চেষ্টা করে যেন সমাজের অন্যান্য মানুষেরা ‘সাধারণ’, ‘স্বাভাবিক’ ও ‘বৈচিত্র্যহীন’ হয়ে থাকে এবং প্রথাবিরোধী পাগলের যেন অনুপ্রবেশ না ঘটে। সত্যাজিৎ রায়ের চলচ্চিত্র ‘হীরক রাজার দেশে’-র মগজ ধোলাইয়ের মন্ত্রগুলো মনে পড়ে। যন্তর মন্তর ঘর এমনই এক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান যেখানে রাজার বাণী জাবর কাটা শেখানো হয়। কেউ যদি প্রথাবিরোধী হতে শুরু করে তাকে ঠেসে ঢোকানো হয় সে ঘরে। অন্যদিকে, উদয়ন পন্ডিত সত্যিই একজন ‘প্রথাবিরোধী পাগল’। গুপি গাইন বাঘা বাইন এবং উদয়ন পন্ডিতের শিক্ষার্থীরা সেই নব্য চিন্তার বাহক এবং অনুসারী।

ক্ষমতা ও আধিপত্যশীলদের প্ররোচনায় সাধারণ মানুষেরা যে স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করে আর পাগল বিরোধী অবস্থান নেয় তা প্রকৃতপক্ষে ক্ষমতাশীনদের স্থিতাবস্থাকেই জারি রাখে। ক্ষমতাশীনরা তাই চায়। তারা যুগে যুগে আধিপত্যশীল মতের যে উত্থান পতনের চিরায়ত নীতি তাকে অস্বীকার করে। এবং এই অস্বীকার করতে গিয়েই তারা ভুল করে। কেননা, কেউ নব্য চিন্তাকে বাঁধা দিক বা না দিক, নব্য চিন্তার আগমন ঘটবেই এবং সমাজে এর প্রভাব থাকবেই। নব্য চিন্তার কণ্ঠ্যরোধের ফলে সমাজে ভীষণ গোপনে নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে বেড়ে উঠতে পারে এবং জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে ভুল ও ক্ষতিকর নব্য চিন্তা। যা এনে দিতে পারে অশুভ ফল। নব্য চিন্তাকে খোলামেলা ভাবে গ্রহণ করলেই এই নব্যচিন্তাগুলোও বার বার আলোচনা, বিতর্ক ও প্রশ্নের সম্মুখীন হবার সুযোগ পায়। ফলে নব্য চিন্তাগুলো ভালো না মন্দ, ইতিবাচক না নেতিবাচক তা ভেবে দেখার জায়গা গুলো উন্মুক্ত থাকে।
বিংশ শতকের দার্শনিক মিশেল ফুঁকোর মতে সমাজ থেকে পাগলদের দূরে সরিয়ে দিলে সেটা ইতিবাচক ফল বয়ে আনবেনা। তিনি এক আশ্চর্য নস্টালজিয়া নিয়ে ইতিহাসের ফিরে তাকিয়ে লিখেছেন রেনেসাঁর যুগে উন্মাদ এবং পাগলরা বিশেষ জ্ঞানের ধারক বলে ধরা হতো। শুধু তাই নয়, সমাজের আর দশজনের সাথে এই পাগলেরাও স্থান পেত। বলাই বাহুল্য, তাদের চিন্তাও সমাজে প্রবেশ করতো। এরপর ক্লাসিকাল এবং আধুনিক যুগে এসে সেই পাগলদের সরিয়ে দেয়া হলো সমাজ থেকে। যার ফলে পাগল এবং স্বাভাবিকের মধ্যে একটি স্পষ্ট তফাৎ সৃষ্টি করে সমাজকে করা হলো আরো বেশি ছাঁচবদ্ধ। ফুঁকোর সাথে পুরোপুরি একমত না হলেও একথা স্বীকার করতে হবে যে, যারা সমাজে স্বাভাবিকত্বকে প্রশ্ন করে তারা ধীরে ধীরে সমাজবিচ্যুত ও প্রান্তিকীকরণের শিকার হলে নব্য চিন্তাগুলো আর প্রবেশ করবেনা সমাজে।

ফুঁকোর মতের সাথে একমত হই বা না হই, এই কথা মেনে নিতেই হবে যে কোন সমাজে আমরা যত বেশি আধিপত্যশীল মতকে আকড়ে ধরি, প্রচলিত মতের বাইরে যেতে ভয় করি ততই সমাজ চিন্তার দিক থেকে ছাঁচবদ্ধ হয়ে পড়ে। ততই আমরা প্রগতিবিমুখ হয়ে পড়ি। চিন্তার অন্ধত্ব থেকে মুক্তি পেতে তাই আমাদের পাগলদের সমাজে স্থান দিতে হবে। প্রথাবিরোধীরা খুব বেশি জন্মায় না। আমাদের সবাইকেই যে প্রথাবিরোধী হতে হবে এমন কোন কথা নেই। কিন্তু প্রথাবিরোধী মতকে রুদ্ধ করা হবে ভয়াবহ ভ্রান্তি।
প্রথাবিরোধীদের প্রবেশাধিকার দেয়ার জন্য শুধু বাক স্বাধীনতাই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন সুযোগ্য মাধ্যমও। প্রয়োজন সহিষ্ণুতা ও নব্য চিন্তার প্রবেশ মেনে নেয়ার মতো মানসিকতা। দুঃখজনক হলো, এই উদারতা অনেকক্ষেত্রে আমাদের সমাজের শিক্ষিত মানুষদের মধ্যেও দেখা যায়না। প্রথাবিরোধী নব্যচিন্তাকে প্রকাশ এবং সমাজের অবধারণ জগতে সঞ্চালনের জন্য আমাদের প্রয়োজন এমন সব শিক্ষিত মানুষ, যারা শুধু শিক্ষিত নয়, উদারও বটে। সেই শর্তেই সমাজে জন্ম হতে পারে নতুন নতুন চিন্তা এবং সমাজ মুক্তি পেতে পারে অজ্ঞানতার অন্ধত্ব থেকে।
প্রথাবাদী সাধারণেরা তো অনেক আছে। আমাদের প্রথাবিরোধী পাগলেরা কই?
Feature Image Courtesy: newsviews.media