ডেভ হোয়াটমোর

ক্রিকেটকে বরাবরই বলা হয়ে থাকে গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। এই গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা হওয়ার কারণেই হয়তো এটি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে একটি। কিন্তু এই খেলা একদিনেই এত জনপ্রিয় হয়নি। দিনে দিনে পরিবর্তিত হয়েছে এ খেলার ধরন, পরিবর্তন এসেছে এ খেলায় ব্যবহৃত রণনীতিরও।

১৯৯৬ বিশ্বকাপের পূর্বে ক্রিকেট অনেকটাই রক্ষ্মণাত্মক ভঙ্গিতে খেলা হতো। কিন্তু ১৯৯৬ বিশ্বকাপের মধ্য দিয়েই ক্রিকেট খেলুড়ে দলগুলোর মধ্যে আক্রমনাত্মক ক্রিকেট খেলার প্রবণতা বেড়ে যায়। এই আক্রমণাত্মকতার জোয়ারই ক্রিকেটকে ধীরে ধীরে নিয়ে গেছে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে।
কিছু কিছু ব্যাক্তিত্বের কারণে মানুষের কাছে আজ ক্রিকেট শুধুই একটি খেলা নয় বরং এটি একটি আবেগের নাম। শচীন টেন্ডুলকার, স্যার ডন ব্র্যাডম্যান, ব্রায়ান লারা, স্যার ভিভ রিচার্ডস, জ্যাক ক্যালিস, শেন ওয়ার্নসহ অনেক কিংবদন্তীর কারণেই আজ ক্রিকেট বিশ্ববাসীর কাছে এতোটা জনপ্রিয়। কিন্তু ক্রিকেটে এমন একজন আছেন যিনি কোচিং এ নিজের পরিকল্পনা এবং মাস্টারমাইন্ডের কারণে কিংবদন্তীদের কাতারে স্থান করে নিয়েছেন। তিনিই হচ্ছেন ডেভ হোয়াটমোর।

ক্রিকেট বিশ্বের পরিচিত নাম ডেভ হোয়াটমোর; Image Courtesy: sportskeeda.com
ক্রিকেট বিশ্বের পরিচিত নাম ডেভ হোয়াটমোর; Image Courtesy: sportskeeda.com

ডেভ হোয়াটমোরের জন্ম ১৯৫৪ সালের ১৬ই মার্চ, শ্রীলঙ্কার কলোম্বোতে। কিন্তু ১৯৬২ সালে তার পরিবার অস্ট্রেলিয়ায় গমন করলে তিনি সেই দেশেরই নাগরিকত্ব লাভ করেন। ১৯৭৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট এবং ১৯৮০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওডিয়াই খেলার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার পদার্পন ঘটে। কিন্তু মাত্র ৭ টেস্ট এবং ১টি ওয়ানডে পর্যন্তই তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার সীমাবদ্ধ থাকে। অবশ্য ঘরোয়া ক্রিকেটে তার ৬০০০ এরও অধিক রান রয়েছে।

১৯৮৯ সালে হোয়াটমোর সকল প্রকার ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এরপরেই তার কোচিং ক্যারিয়ারের সূচনা ঘটে। ডেভ হোয়াটমোর তার বর্ণার্ঢ্য কোচিং ক্যারিয়ারে যত দলেরই দায়িত্ব নিয়েছেন, তন্মধ্যে প্রায় সব দলের হয়েই তিনি অর্জন করেছেন সফলতা। তার দিকনির্দেশনা, দুরদর্শিতা এবং অন্যদের তুলনায় সকল বিষয় আলাদাভাবে চিন্তা করার যোগ্যতাই তাকে করে তুলে ক্রিকেটের স্পেশাল ওয়ান।

হোয়াটমোরের খেলোয়াড়ি জীবনের একটি ছবি; Image Courtesy: Cricektcountry.com
হোয়াটমোরের খেলোয়াড়ি জীবনের একটি ছবি; Image Courtesy: Cricektcountry.com

মিশন শ্রীলঙ্কা

ডেভ হোয়াটমোরের ক্রিকেট কোচিং ক্যারিয়ার শুরু হয় শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের দায়িত্ব নেয়ার মাধ্যমে। তিনি তৎকালীন শ্রীলঙ্কা দলের মধ্যে এমন কিছু পরিবর্তন আনেন যা ওই দলকে একটি মাঝারি মানের দল থেকে বিশ্ব ক্রিকেটের এক অন্যতম পরাশক্তি হিসবে গড়ে তোলে। শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তী সানাথ জয়সুরিয়ার কথা জানেন না এমন কোনো ক্রিকেটপ্রেমী হয়ত খুঁজেও পাওয়া যাবে না। কিন্তু জয়সুরিয়ার একজন সাধারণ খেলোয়াড় থেকে কিংবদন্তী হয়ে ওঠার পেছনে হোয়াটমোরের অবদান কোন অংশেই ভুলার মতো নয়।

শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের দায়িত্ব নেওয়ার পরই তিনি দলের সকলের মানসিকতার মধ্যে এক বিরাট পরিবর্তন নিয়ে আসেন। সাথে সাথে পরিবর্তন আনেন তাদের গেমপ্ল্যানেও। হোয়াটমোরের এসব ভিন্নরকমের কৌশল শুধু শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের খেলার ধরনেই পরিবর্তন আনে নি বরং বিশ্বক্রিকেটেও এনেছে অপার পরিবর্তন। পূর্বে ক্রিকেট খেলায় প্রায় সব দলই ব্যাটিং করলে উইকেট ধরে রাখার জন্য শুরুতে কিছুটা রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলত। এরপর, শেষের ওভারগুলোতে দ্রুতগতিতে রান করে দলকে বড় সংগ্রহের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলতো।

১৯৯৬ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা দলের সাথে হোয়াটমোর; Image Courtesy: Getty images
১৯৯৬ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা দলের সাথে হোয়াটমোর; Image Courtesy: Getty images

ডেভ হোয়াটমোর প্রথমেই ব্যাটিং লাইনাপে কিছু পরিবর্তন আনেন। তখনকার সময়ে সানাথ জয়সুরিয়া এবং উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান রমেশ কালুউইথারানা মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করতেন এবং ইনিংস শেষে দলের ফিনিশিং এর দায়িত্বও তারা পালন করতেন। কিন্তু ডেভ হোয়াটমোর প্রতিপক্ষকে ম্যাচের শুরু থেকে চাপে ফেলার জন্য এক নতুন রণনীতি সাজান। তিনি ব্যাটং অর্ডার পরিবর্তন করে সানাথ জয়সুরিয়া এবং রমেশ কালুউইথারানাকে ওপেনিংয়ে পাঠান এবং ইনিংসের শুরুতেই ১০ ওভারের ব্যাটিং পাওয়ারপ্লের পূর্ণ ফায়দা তোলার জন্য আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলার কৌশল সাজান। এই পুরো দলের আক্রমণাত্মক খেলার ফলেই ১৯৯৬ সালে প্রথমবার ক্রিকেটে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় শ্রীলঙ্কা।

জয়সুরিয়া এবং কালুউইথারানা দুইজনেই ইনিংসের শুরু থেকে তাদের স্বভাবসুলভ আক্রমণাত্মক খেলা খেলতে থাকেন যা শুধু তাদের দুজনই নয় বরং উপকৃত করেছে পুরো শ্রীলঙ্কা দলকে। কালুউইথারানা তেমন একটা ধারাবাহিক না হতে পারলেও জয়সুরিয়া যেমন ছিলেন আগ্রাসী ঠিক তেমন ধারাবাহিকও। জয়সুরিয়া এবং কালুউইথারানার এই আগ্রাসী মনোভাবের প্রভাব শুধু নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, তা অনুপ্রাণিত করেছে পুরো শ্রীলঙ্কা দলকে। ডেভ হোয়াটমোরের অধীনে শ্রীলঙ্কা ২০০২ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও ভারতের সাথে যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন ঘোষিত হয়।

হোয়াটমোরের অধীনে ১৯৯৬ বিশ্বকাপজয়ী শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দল; Image Courtesy: indiatoday.in
হোয়াটমোরের অধীনে ১৯৯৬ বিশ্বকাপজয়ী শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দল; Image Courtesy: indiatoday.in

মিশন বাংলাদেশ

বাংলাদেশের হেড কোচ হয়ে ডেভ হোয়াটমোরের প্রত্যাবর্তন যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটে জয়ের খরায় বহু কাঙখিত এক পশলা বৃষ্টির মতো ছিল। হোয়াটমোর আশার আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট শেষ হাসি হেসেছিল ১৯৯৯ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে, স্কটল্যান্ড এবং ক্রিকেট পরাশক্তি পাকিস্তানকে হারিয়ে। কিন্তু এরপর দীর্ঘ পাচ বছর তথা টানা ২৪টি ওয়ানডে এবং ১১টি টেস্ট ম্যাচে কোনো জয়ের মুখ দেখেনি বাংলাদেশ। যার ফলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একনাগাড়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ হারের এক লজ্জাজনক রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ। হোয়াটমোরের অধীনেই ২০০৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে জিতে হারের সেই যন্ত্রনাময় বৃত্ত থেকে মুক্তি পায় বাংলাদেশ।

ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ জিতে দলের সাথে উল্লাসে হোয়াটমোর; Image Courtesy: stakebd.com
ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ জিতে দলের সাথে উল্লাসে হোয়াটমোর; Image Courtesy: stakebd.com

সেই ম্যাচে তৎকালীন উদীয়মান ক্রিকেটার মোহাম্মদ আশরাফুলের মারকুটে ৫০ এর কারনে জয়ের মুখ দেখে বাংলাদেশ। হোয়াটমোরের অধীনেই বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম বার ভারতবধ করতে সক্ষম হয়। এছাড়া তার অধীনেই বাংলাদেশ তৎকালীন জিম্বাবুয়ে, কেনিয়া, স্কটল্যান্ড এর সাথে নিয়মিত সিরিজ জেতে যা বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিয়মিত জেতার স্বাদ পেতে সাহায্য করে। এছাড়াও তার সময়ে বাংলাদেশ কিছু ক্রিকেট পরাশক্তি দলগুলোর বিপক্ষে এমন জয় পেয়েছিল যেগুলো দেশের ক্রিকেট গতিপথকে করেছে আরো বেগময়। তার সময়ই বাংলাদেশের ক্রিকেট পায় দেশের প্রথম সুপারস্টার, মোহাম্মদ আশরাফুল।

২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেন্সে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয় যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটে এক নতুন ভোরেরই ইংগিত দিয়েছিল। সেই ম্যাচেই সেঞ্চুরি করে বিশ্বকে নিজের আগমনী বার্তা দিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রথম সুপারস্টার, মোহাম্মদ আশরাফুল।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ের সেই রোমাঞ্চকর মুহুর্ত; Image Courtesy: indiatvnews.com
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ের সেই রোমাঞ্চকর মুহুর্ত; Image Courtesy: indiatvnews.com

তার অধীনে বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম আন্তর্জাতিক টেস্ট ম্যাচ এবং টেস্ট সিরিজ জয় লাভ করে। তারই অধীনে বাংলাদেশ তৎকালীন তারকাময় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও প্রথম জয়ের দেখা পায়। এতোকিছু সত্ত্বেও হোয়াটমোরের অধীনে বাংলাদেশের সেরা অর্জন এখনো বাকি ছিল। ২০০৭ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে ভারতকে হারিয়ে সুপার এইটে উঠে বাংলাদেশ।

সুপার এইটে বিশ্বকাপ জয়ের আরেক হট ফেভারিট দল দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে তাক লাগিয়ে দেয় বাংলাদেশ। ২০০৭ বিশ্বকাপের পর শুধুমাত্র দেশে ভারতের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে এবং টেস্ট সিরিজ পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে হোয়াটমোরের অবদান অনেক; Image Courtesy: Getty Image
বাংলাদেশের ক্রিকেটে হোয়াটমোরের অবদান অনেক; Image Courtesy: Getty Image

হোয়াটমোরের অধীনে বাংলাদেশ শুধুমাত্র একটি লড়াকু দলেই পরিণত হয়নি বরং তিনি দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ ও একসাথেই গড়ে গিয়েছিলেন। আশরাফুল, মাশরাফি, রাজ্জাক, সাকিব, তামিমরা না থাকলে হয়ত বাংলাদেশ দল বর্তমান বাংলাদেশ দলে পরিণত হতে পারত না।

মিশন ভারত (অনুর্ধ্ব-১৯ দল)

বাংলাদেশে যাত্রা শেষে ডেভ হোয়াটমোর পাড়ি জমান ভারতে। কিন্তু, ভারতের জাতীয় দল নয়, তিনি নিযুক্ত হয়েছিলেন ভারতের অনুর্ধ্ব-১৯ দলের প্রধান কোচ হয়ে। তার অধীনে ভারত অনুর্ধ্ব-১৯ দল ২০০৮ এ মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হতে সমর্থ হয়। তার অধীনস্থ দলটির অধিনায়ক ছিলেন বর্তমান বিশ্বে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন, ভিরাট কোহলি। এছাড়া সেই দলে থাকা রবীন্দ্র জাদেজা এবং মনীশ পান্ডেও বর্তমান ভারত ক্রিকেট দলের এক অনবদ্য অংশ।

হোয়াটমোরের অধীনে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী ভারতীয় ক্রিকেট দল; Image Courtesy: sportskeeda.com
হোয়াটমোরের অধীনে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী ভারতীয় ক্রিকেট দল; Image Courtesy: sportskeeda.com

মিশন আইপিএল (কলকাতা নাইট রাইডার্স)

২০১০ আইপিলে শাহারুখ খানের দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের হেড কোচের দায়িত্ব পান হোয়াটমোর। তার দায়িত্ব নেয়ার প্রথম বছরে নাইট রাইডার্স সেমিফাইনালে কোয়ালিফাই করতে না পারলেও দ্বিতীয় বছরে তথা ২০১১ আইপিএলে কোলকাতা প্রথমবারের মতো প্লে-অফে কোয়ালিফাই করতে সমর্থ হয়।

তার অধীনেই প্রথম ২০১১ সালে গৌতম গম্ভীর কলকাতার অধিনায়ক হিসেবে নিযুক্ত হন এবং সাকিব আল হাসান ও সুপারস্টার স্পিনার সুনিল নারায়ন প্রথম কলকাতা দলে খেলার সুযোগ পান যাদের কৃতিত্বে কলকাতা ২০১২ এবং ২০১৪ সালে আইপিএলে চ্যাম্পিয়ন হতে সমর্থ হয়।

কলকাতার হয়ে প্রেস কনফারেন্সে হোয়াটমোর; Image Courtesy: sportskeeda.com
কলকাতার হয়ে প্রেস কনফারেন্সে হোয়াটমোর; Image Courtesy: sportskeeda.com

মিশন পাকিস্তান

২০১২ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় এশিয়া কাপ ক্রিকেটের কথা কারও ভুলে যাওয়ার কথা নয়। উক্ত টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলতে থাকা বাংলাদেশ দলকে হারিয়ে টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন হয় পাকিস্তান। সেই পাকিস্তান দলেরও হেড কোচ ছিলেন তিনি।

পাকিস্তানে দলের সঙ্গে অনুশীলনে হোয়াটমোর; Image Courtesy: arabnews.com
পাকিস্তানে দলের সঙ্গে অনুশীলনে হোয়াটমোর; Image Courtesy: arabnews.com

মিশন জিম্বাবুয়ে

ডেভ হোয়াটমোরের অধীনে হারের সাগরে ডুবতে থাকা জিম্বাবুয়েও যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছিল। তার অধীনে জিম্বাবুয়ে দল ২০১৪ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌছাতে না পারলেও গ্রুপ পর্বে ভারত এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের খুব কাছাকাছি এসেছিল। যদিও জয়ের দেখা পায়নি তবে শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে লড়াই করার তীব্র মানসিকতা ঠিকই তৈরি হয়েছিল একসময়ের ধুকতে থাকা জিম্বাবুয়ে শিবিরে।

২০১৬ সালে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ডের সাথে কোন্দলের কারণে চুক্তি শেষ হওয়ার আগেই হেড কোচের পদ থেকে পদত্যাগ করেন হোয়াটমোর। ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার মাটিতেই ৩-২-এ সিরিজ জিতে চমক লাগিয়ে দেয় জিম্বাবুয়ে। ওই সিরিজে যেন আক্রমনাত্মক ক্রিকেটের এক পসরা সাজিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। সে সময়ে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দলের দায়িত্বে অবশ্য হোয়াটমোর দায়িত্বাধীন না থাকলেও অতীতে তার কোচিংই জিম্বাবুয়েকে সেই সময়ে এক ভয়ডরহীন দল হিসেবে রুপান্তর করতে সক্ষম করেছিল।

জিম্বাবুয়ের খেলোয়াড়ের সঙ্গে অনুশীলনে হোয়াটমোর; Image Courtesy: skysports.com
জিম্বাবুয়ের খেলোয়াড়ের সঙ্গে অনুশীলনে হোয়াটমোর; Image Courtesy: skysports.com

মিশন কেরালা ক্রিকেট (ভারত) ও মিশন নেপাল

২০১৭ সালে ভারতের কেরালা ক্রিকেট টিমের হেড কোচ হিসেবে নিযুক্ত হন হোয়াটমোর। তার অধীনে কেরালা দল ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ রানজি ট্রফিতে যথাক্রমে কোয়ার্টার ফাইনাল এবং সেমিফাইনালে প্রথমবারের মতো উঠতে সক্ষম হয় যা কেরালা ক্রিকেটে এক নতুন সূর্যের উদয় ঘটিয়েছে।

২০২০ সালে হোয়াটমোর সিঙ্গাপুর জাতীয় দলের হেড কোচ হিসেবে দায়িত্ব নিলেও পরে একই বছরে তিনি নেপাল জাতীয় দলের হেড কোচ হিসেবে যোগদান করেন এবং বর্তমানে তিনি একই দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন।

নেপাল দলের সঙ্গে অনুশীলনে হোয়াটমোর; Image Courtesy: cricnepal.com
নেপাল দলের সঙ্গে অনুশীলনে হোয়াটমোর; Image Courtesy: cricnepal.com

একজন ভালো ছাত্রকে দিয়ে ভালো ফলাফল তো অনেকেই করাতে পারে। কিন্তু একজন দুর্বল ছাত্রকে সেরা ছাত্র বানিয়ে ফেলার কৃতিত্ব সবাই দেখাতে পারে না। হোয়াটমোর যেখানেই দায়িত্ব পেয়ছেন, সেখানেই নিজের ছাপ রেখে গেছেন। শুধু খেলোয়াড় হয়েই নয়, বরং কোচ হিসবেও যে ক্রিকেট কিংবদন্তীদের কাতারে নাম লেখানো তাই যেন তিনি স্বর্ণাক্ষরে লিখে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন।

Image Courtesy: skysports.com